Advertisement
E-Paper

হার ৩ প্রকাশকের, জয়ী ফোটোকপি

পাঠ্যবইয়ের চড়া দাম। তাই বই ফোটোকপি করেই পড়তে হবে বলে দাবি পড়ুয়াদের। সেই দাবিতেই সিলমোহর বসাল দিল্লি হাইকোর্ট। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছোট্ট দোকান রামেশ্বরী ফোটোকপি সার্ভিস-এর সঙ্গে আইনি যুদ্ধে হেরে গেল তিনটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পাঠ্যবইয়ের চড়া দাম। তাই বই ফোটোকপি করেই পড়তে হবে বলে দাবি পড়ুয়াদের। সেই দাবিতেই সিলমোহর বসাল দিল্লি হাইকোর্ট। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছোট্ট দোকান রামেশ্বরী ফোটোকপি সার্ভিস-এর সঙ্গে আইনি যুদ্ধে হেরে গেল তিনটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা।

চার বছর আগে বই ফোটোকপি করার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল প্রকাশনা সংস্থা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ও টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস। আর্জিতে তারা জানায়, বেআইনি ভাবে তাদের প্রকাশিত বইয়ের আদ্যোপান্ত ফোটোকপি করে বিক্রি হচ্ছে। কপিরাইট আইন মানা হচ্ছে না। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দোকান রামেশ্বরী ফোটোকপি সার্ভিস থেকে বইয়ের ফোটোকপি বিক্রির উপর স্থগিতাদেশ জারি করে দিল্লি হাইকোর্ট।

জোট বেঁধে রামেশ্বরী ফোটোকপি সার্ভিস-এর পাশে দাঁড়িয়ে আইনি যুদ্ধে নামেন ছাত্রছাত্রীরা। আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোটা দেশের ছাত্রছাত্রীদেরই স্বস্তি দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রাজীব সহায় এন্ডল প্রকাশকদের আর্জি খারিজ করেছেন। যার অর্থ, ছাত্রছাত্রীরা আগের মতোই ফোটোকপি করা বই কিনতে পারবেন। কোর্টের রায় বলছে, কপিরাইট ঐশ্বরিক অধিকার নয়। শিক্ষারও সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম।

এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে গোটা দেশের ছাত্রসমাজ। কারণ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ফোটোকপির অবদান অনস্বীকার্য। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে দিল্লির নর্থ ক্যাম্পাস, সর্বত্রই ফোটোকপির দোকান ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ঠিকানা। তা সে বিষয় বা ডিগ্রি যা-ই হোক না কেন। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের প্রাক্তনী, বর্তমানে দিল্লি আইএসআই-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অভিরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিনে পড়তে হলে যে সব বই পড়েছি, সেগুলোর মুখ দেখতাম কি না কে জানে! শিক্ষা যখন সম্পদ, তখন কপিরাইটের জন্য তার পুনর্বণ্টনে বাধা আসা ঠিক নয়।’’ অভিরূপবাবুর কথায়, ‘‘তবে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে প্রকাশনা সংস্থাগুলির সঙ্গে দর কষাকষি করে পড়ুয়াদের জন্য কম দামে বইয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। তা কঠিন নয়।’’

প্রকাশনা সংস্থাগুলির যুক্তি ছিল, কপিরাইট আইন অনুযায়ী একমাত্র তারাই তাদের প্রকাশিত বইয়ের কোনও অংশ ফের ছাপতে পারে। অথচ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোটোকপি সেন্টারগুলি গোটা বই ছেপে বিক্রি করছে। এমনকী বিভিন্ন বইয়ের বাছাই করা অংশ বেছে ‘কোর্স মেটিরিয়াল’ তৈরি করেও বিক্রি করছে। তা হলে তাদের বই বিক্রি হবে কী করে? আদালতের রায়ের পরে প্রকাশনা সংস্থাগুলি বিবৃতিতে জানায়, ‘‘আমরা এই রায় আশা করিনি। লেখক, প্রকাশক, ছাত্রদের স্বার্থেই এই মামলা হয়েছিল। ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে আসল বই পৌঁছনোর দিকটি এই রায়ে গুরুত্ব পায়নি। আদালতের পুরো রায় খতিয়ে দেখে, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই পরের পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’

প্রকাশক সংস্থাগুলির আবেদনে ২০১২-র অক্টোবরে আদালতের নির্দেশে শুধুমাত্র রামেশ্বরী ফোটোকপি সার্ভিস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আশেপাশের দোকানগুলি বইয়ের ফোটোকপি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ভয় ছিল, তাদেরও আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ফোটোকপি সেন্টারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে আদালতে জানায়, পড়াশোনার প্রয়োজনেই পড়ুয়ারা বই ফোটোকপি করেন। কেউ ব্যবসায়িক ফায়দা লুটছে না। তাই একে আইন ভাঙা হিসেবে দেখা ঠিক নয়। ছাত্রছাত্রীরা ‘আসিয়াক’ (অ্যাসোসিয়েশন অব স্টুডেন্টস ফর ইক্যুইটেবল অ্যাকসেস টু নলেজ) নামের সংগঠন তৈরি করে আইনি যুদ্ধ করে। সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব গৌতম বলেন, ‘‘আদালত যে ছাত্রছাত্রীদের দুশ্চিন্তা বুঝেছে, তাতেই আমরা খুশি।’’

আইনজীবীদের মতে, শিক্ষা ক্ষেত্রে কপিরাইট আইনের দিক থেকে এই রায় মাইলফলক। কারণ এখানে বেসরকারি স্বত্বের থেকেও সামাজিক ন্যায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কপিরাইট আইন বিশেষজ্ঞ শামনাদ বশির বলেন, ‘‘কপিরাইট আইনে জনস্বার্থ ও বেসরকারি স্বার্থের ভারসাম্য থাকা দরকার। হাইকোর্টের রায় সেই ভারসাম্যকেই রক্ষা করল।’’

High court photocopies Books licensing scheme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy