Advertisement
E-Paper

আগুন-গুলি-গ্যাসে দিনভর জ্বলল উত্তর-পূর্ব দিল্লি, মৃত বেড়ে ১৩, সন্ধ্যায় জারি কার্ফু

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, মৌজপুর, জাফরাবাদ, চাঁদ বাগ ও করাবল নগরে কার্ফু জারি করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:০৯
দিল্লির রাস্তায় টহল পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর। ছবি: পিটিআই

দিল্লির রাস্তায় টহল পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর। ছবি: পিটিআই

১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। রাস্তার দখল নিয়েছে পুলিশ-আধাসেনা। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবু প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কার্যত জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে মঙ্গলবারও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। এ দিন হাসপাতালে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এক পুলিশ কর্মী-সহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। আহত দেড় শতাধিক। সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে জারি হয়েছে কার্ফু।

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে লাগাম টানতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) পদে আনা হয়েছে এসএন শ্রীবাস্তব নামে এক আইপিএস কর্তাকে। দিল্লির পরিস্থিতির খবর সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। হিংসায় মদত যোগাতে পারে এমন খবর ও ভিডিয়ো সম্প্রচারের ক্ষেত্রে টিভি চ্যানেলগুলিকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের জারি করা সেই নির্দেশিকা

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ মানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বুধবারও ছিল পরীক্ষা। দিল্লি সরকারের শিক্ষা দফতরের অনুরোধে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ওই পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছে সিবিএসই। ওই পরীক্ষা কবে নেওয়া হেবে তা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

পরীক্ষা স্থগিতের নোটিস

দিনভর উত্তাল রাজধানী

সিএএ-কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে গত তিন দিন ধরে উত্তাল দিল্লি। সোমবার এক পুলিশ কর্মী-সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। লাঠি, রড, ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। একাধিক দোকানপাট, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, করাবল নগরের মতো এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ দিনও একাধিক জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।

জারি কার্ফু

প্রায় গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লি জুড়েই ১৪৪ ধারা করা হয়েছিল সোমবার। মঙ্গলবারও তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার যে ভাবে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে দিল্লি পুলিশের। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করে কার্ফু জারি করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সিপি প্রবীর রঞ্জন বলেন, ‘‘মৌজপুর, জাফরাবাদ, চাঁদ বাগ ও করাবল নগরে কার্ফু জারি করা হয়েছে।’’

মৃত বেড়ে ১৩

তার মধ্যেই মঙ্গলবারও হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। সব মিলিয়ে এক পুলিশ কর্মী-সহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩— জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক এম এস রনধাওয়া। এ ছাড়া আহত হয়ে দেড় শতাধিক মানুষ ভর্তি রয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর।

রাজধানীর রাজপথে জ্বলছে আগুন। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স

আরও পডু়ন: অশান্ত দিল্লিতে সেনা নামানো নিয়ে প্রশ্ন, শাহের সঙ্গে বৈঠক কেজরীর

পুলিশের দাবি

তবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এম এস রনধাওয়া সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি এখন মোটের উপর নিয়ন্ত্রণে। তবে এখনও গলি, সরু রাস্তায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে ৬৭ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোট ১১টি এফআইআর-এর ভিত্তিতে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সরু গলিগুলিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন রনধাওয়া। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। কিন্তু রনধাওয়া সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সিআরপিএফ, র‌্যাফ ও পুলিশ মিলিয়ে পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।’’

আক্রান্ত সাংবাদিক

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির খবর সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ জন সাংবাদিক। একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য দিকে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের চার সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁদের এক জনের একটি দাঁত ভেঙে গিয়েছে। কোনওক্রমে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান ওই চার জন।

গোকুলপুরী এলাকায় টায়ার মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স

সেনা নামানো নিয়ে কথা

দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। সংঘর্ষের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে ওই বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। বৈঠকে সেনা নামানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, এখনই না হলেও, প্রয়োজনে সেনা নামানোর রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গুজবে কান না দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরও পডু়ন: অগ্নিগর্ভ দিল্লিতে রোষের মুখে সাংবাদিকরাও, এক জনকে লক্ষ্য করে গুলি, আক্রান্ত ৫

পরিদর্শনে উপ-রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী

উত্তর-দিল্লির সংঘর্ষে আহতদের অনেকেই ভর্তি দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে। মঙ্গলবার তাঁদের দেখতে হাসপাতালে যান দিল্লির উপ-রাজ্যপাল অনীল বৈজল। পরে যান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। সঙ্গে ছিলেন আপ নেতা ও মন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। আহতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন কেজরীবাল।

বন্ধ স্কুল কলেজ, মেট্রো

সোমবারের সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরকারি অফিসেও হাজিরা ছিল খুব কম। জাফরাবাদ মৌজপুর, বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল দিনভর। এই স্টেশনগুলির গেট বন্ধ করে রাখার পাশাপাশি ট্রেনও চালানো হয়নি।

Delhi Delhi Violence CAA Protest Curfew
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy