Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ডোভালের সুরক্ষার ‘আশ্বাস’ নিয়ে প্রশ্ন, শুরু বিতর্কও

গত রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে সংঘর্ষ ছড়াতে থাকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী এলাকায়।

দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কথা অজিত ডোভালের। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কথা অজিত ডোভালের। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

‘‘যো হো গ্যায়া হো গ্যায়া।... এখন থেকে আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকার ও পুলিশের!’’

বক্তা জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। আজ দিল্লির জাফরাবাদের সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় দাঁড়িয়ে ওই আশ্বাস দিতে দেখা যায় ডোভালকে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ওই আশ্বাস কেন রবিবারেই দেওয়া হল না। উল্টে কেন দু’দিন ধরে জ্বলতে দেওয়া হল গোটা দিল্লিকে। তার থেকেও বড় প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বলছেন, ‘‘২৭ জন নিহত হওয়া সত্ত্বেও ডোভাল বলছেন যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে। এমন অসংবেদনশীল কথা কী করে বলেন তিনি?’’ জবাবে আজ বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের ব্যাখ্যা, ‘‘অতীতে দিল্লির শিখ-বিরোধী দাঙ্গা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজীব গাঁধী ঘনিষ্ঠ স্যাম পিত্রোদা বলেছিলেন, হুয়া তো হুয়া। মনে রাখতে হবে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় তিন দিনে তিন হাজার শিখের মৃত্যু হয়েছিল দিল্লিতে। এখানে এক এলাকার বাইরে সংঘর্ষ ছড়ায়নি।’’

গত রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে সংঘর্ষ ছড়াতে থাকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী এলাকায়। সোম ও মঙ্গলবার তা চরম আকার নেয়। গত কাল ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার উদ্দেশে রওনা হতেই দিল্লি সামলানোর দায়িত্ব ডোভালের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব নিয়ে রাতেই প্রথমে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ডিসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন ডোভাল। বৈঠক শেষে বেরিয়ে পড়েন উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে। দিল্লি পুলিশের দাবি, রাত থেকে পদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে উপদ্রুত এলাকাগুলিতে ফ্ল্যাগ মার্চ, মাইকে করে প্রচার চালানোয় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে।

আরও পড়ুন: রাস্তা অন্ধকার, ফের স্লোগান ‘গোলি মারো’

আজ সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দিল্লির পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন ডোভাল। পরে দুপুরে দিল্লি পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে জাফরাবাদ, মৌজপুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান। কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। জাফরাবাদেই এক মুসলিম ছাত্রী ডোভালের কাছে অভিযোগ জানান, ‘‘ঝামেলার কারণে রাত্রে ঘুমোতে পারছি না। পড়তে যেতে পারছি না।’’ ডোভাল আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে। পুলিশ ও সরকারের দায়িত্ব হল আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়া।’’ ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ নিজের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’ ডোভাল আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি এখন থেকে করবে।’’ পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ইনশা আল্লা, এখানে শান্তি ফিরবে। পুলিশ নিজেদের কাজ করছে।’’

উপদ্রুত এলাকা ঘুরে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পরিস্থিতি জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যান ডোভাল। দু’ঘণ্টার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা ও দিল্লি পুলিশের কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েক। দিল্লি পুলিশ রাতে জানায়, ‘‘সব মিলিয়ে ১৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১০৬ জন। সর্বত্র পরিস্থিতি শান্ত।’’ প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন,‘‘কে উস্কানি দিয়েছে তা তদন্ত হলেই স্পষ্ট

হয়ে যাবে।’’

গত কাল রাত ও আজ দুপুরে ডোভাল হিন্দু বা মুসলিম যে মহল্লাতেই গিয়েছেন সেখানেই পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ ওঠে, যে গলিগুলিতে মূলত সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে ঢুকতে ব্যর্থ পুলিশ। একাধিক স্থানে কেবল নীরব দর্শক হয়ে ছিল তারা। পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট স্বরাষ্ট্র কর্তারাও। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন পুলিশ ব্যর্থ হল? নির্দিষ্ট ছক মেনে কি পুলিশকে পরিকল্পিত ভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল? এর কোনও জবাব নেই কারও কাছে। তবে ওই স্বরাষ্ট্র কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘জামিয়া কাণ্ডে অতিসক্রিয়তা দেখানোয় হিতে বিপরীত হয়। মামলা চলছে আদালতে। সম্ভবত তাই আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়নি দিল্লি পুলিশকে।’’ দিল্লিতে ঝামেলা ঠেকাতে গত তিন দিনে ৪৫ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপদ্রুত এলাকাতে কেন আধাসেনা বা প্রয়োজনে সেনা নামানো হল না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু উত্তর নেই।

এক বছর আগে ঠিক এই দিনে বালাকোট অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন ডোভাল। এখন তাঁরই হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির নিরাপত্তার দায়িত্ব। প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো পদে থাকা এক জন ব্যক্তিকে কেন দিল্লির একটি জেলার ঝামেলা থামাতে নিয়োগ করা হল। গোটা পর্বে দিল্লি পুলিশ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে ব্যর্থ তা কি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছে সরকারও? বিশেষ করে যেখানে অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেখানে তাঁকে একপাশে রেখে ডোভালকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।

সরকারের একাংশের মতে, সরকারের শীর্ষ দুই কর্তার মধ্যে মনোমালিন্যের কারণেই ডোভালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। রবিবার জাফরাবাদে উত্তেজনা শুরু হলেও শাহ ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আমদাবাদে উড়ে যান। তবে মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ডোভাল প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দু’জনকেই দিল্লির পরিস্থিতি জানিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE