Advertisement
০১ মে ২০২৪

জেলের কুঠুরিতে একাই বিড়বিড় করছেন গুরমিত

এক সময় তাঁর ‘বাণী’ শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। এখন জেলে তাঁর কথায় শোনার কেউ নেই। শ্রোতা বা কথা বলার সঙ্গী— দুই এখন জেলের ৮ বাই ৮ ফুট কুঠুরির দেওয়াল। সূত্রের খবর, জেল-কুঠুরির দেওয়ালের সঙ্গেই এখন বকে চলেছেন রাম রহিম।

গুরমিত রাম রহিম সিংহ

গুরমিত রাম রহিম সিংহ

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

সিরসায় ৭০০ একরের বেশি জমির উপর ছ়ড়িয়ে ডেরার সদর দফতর। গাড়ির সংখ্যা ১৭০টিরও বেশি। সেই বিলাসবহুল জীবন থেকে রোহতকের সুনারিয়া জেলের ৮ বাই ৮ ফুটের কুঠুরি। এই জেলেই এক সপ্তাহ কাটিয়ে ফেললেন গুরমিত রাম রহিম সিংহ। এ বার তো কাজ করতে হবে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত এই ধর্মগুরুকে। কী কাজ? ৪০ টাকার দিনমজুরিতে জেলে মালির কাজ করবেন রাম রহিম!

এক সময় তাঁর ‘বাণী’ শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। এখন জেলে তাঁর কথায় শোনার কেউ নেই। শ্রোতা বা কথা বলার সঙ্গী— দুই এখন জেলের ৮ বাই ৮ ফুট কুঠুরির দেওয়াল। সূত্রের খবর, জেল-কুঠুরির দেওয়ালের সঙ্গেই এখন বকে চলেছেন রাম রহিম। দু’দিন আগেই রাত হলেই বাবা কান্নাকাটি শুরু করতেন। চিৎকার করে প্রশ্ন করতেন, ‘‘আমি কী ভুল করেছি? আমার কী দোষ?’’ আর এখন রাত হলেই শুরু হচ্ছে বাবার দেওয়ালের সঙ্গে বকর বকর।
জেল সূত্রের খবর, বাবার এই সব কাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জেলের অন্য বন্দিরা।

আরও পড়ুন: জেলে কি নকল ‘বাবা’? ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়

সম্প্রতি ওই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দলিত নেতা স্বরাজ কিরাদ। তিনি জানিয়েছেন, সুনারিয়া জেলে সবার নজর এখন গিয়ে পড়েছে বাবা রাম রহিমের উপর। তাই যে সব জেলবন্দির রিলিজ অর্ডার বেরিয়ে গিয়েছে বা যাদের জামিনের সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে, তাদেরও সমস্ত কিছু আটকে গিয়েছে রাম রহিমের কারণে। যে কারণে ক্ষুব্ধ জেলের অন্য কয়েদিরা।

দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ২৫ অগস্ট রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে পঞ্চকুলার বিশেষ সিবিআই আদালত। ২৮ অগস্ট তাঁকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক জগদীপ সিংহ। বাবার অস্বস্তি অবশ্য এতেই শেষ হচ্ছে না। দু’টি খুনের মামলার খাঁড়া এখনও তাঁর মাথার উপরে ঝুলছে। এ ছাড়া তাঁর বহু ভক্তের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং বহু ভক্তের লিঙ্গচ্ছেদ করার ঘটনারও তদন্ত করছে সিবিআই।

আর জোড়া ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে জেলই ঠিকানা এই ধর্মগুরুর। তার পরে কেটে গিয়েছে সাত দিন। কিন্তু এখনও জেলের জীবন মেনে নিতে পারছেন না রাম রহিম। প্রথম দু’দিনে জেলে খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘লভ চার্জার’। ইদানীং তিনি খুব অল্প খাওয়াদাওয়া করছেন। কারওর সঙ্গে কথাও বলছেন না। সূত্রের খবর, রাম রহিমকে ফল, জেলের খাবার এবং মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিচ্ছেন জেল কর্তৃপক্ষ। সব রকম আরামে অভ্যস্ত বাবা শোয়ার জন্য পাচ্ছেন দু’টি কম্বল এবং একটি তুলোর বিছানা। অন্য কয়েদিদের মতো জেল সুপারের ডাকে ‘হাজির’ বলে সাড়াও দিচ্ছেন রাম রহিম। তবে মাঝে মধ্যেই বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কথা বলছেন বাবা। তবে জেল সূত্রের খবর, সাত দিন কেটে যাওয়ার পরে আস্তে আস্তে জেলের জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছেন রাম রহিম।

নিজের পালিতা কন্যা হানিপ্রীতকে নিজের কাছে রাখার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন জেলবন্দি রাম রহিম। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে বাবাকে সাহায্য করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে জেলের দুই কয়েদিকে।

জেল সূত্রের খবর, প্রতিদিন জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসার তালিকায় হানিপ্রীতের নাম রেখেছেন রাম রহিম। এ ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন রাম রহিমের মা নসীব কৌর, মেয়ে চরণপ্রীত ও আমনপ্রীত, ছেলে জসমিত, ছেলের বৌ হুসানপ্রীত, দুই জামাই শানমিত ও রুহেমিত এবং ডেরা সচ্চা সৌদার ট্রাস্ট বিপাসনার চেয়ারপার্সন দান সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE