বর্ষার মরসুমে স্বল্প সময়ে বৃষ্টির প্রবণতা যে বাড়ছে, সেই ইঙ্গিত বছর পাঁচেক আগেই দিয়েছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই কি বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে হিমালয় পার্বত্য এলাকায়? মঙ্গলবার মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, বাগেশ্বর-সহ বিভিন্ন জেলা। তার পরেই আবহবিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করার প্রশ্নটি জোরালো হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টির এই দাপট এ বারে প্রথম নয়। বরং এই মরসুমেই একাধিক বার তা দেখা গিয়েছে। কখনও উত্তরাখণ্ড, হিমাচলে। কখনও বা সিকিমে। সেই অতিবৃষ্টির সঙ্গেই জুড়েছে হড়পা বান, ধসের মতো বিপদ। অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ এবং ভূমিগত দিক থেকে ‘অতি সংবেদনশীল’ হিমালয় পার্বত্য এলাকায় বেলাগাম উন্নয়নের ফলেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে।
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, কোনও একটি ছোট এলাকায় যদি এক ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটারের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়, তা হলে তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা হয়। পাহাড়ি এলাকায় এই ধরনের ঘটনা বিরল নয়। তবে ১৯৮৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের জলবায়ু গবেষণা শাখার তৎকালীন বিজ্ঞানী পুলক গুহঠাকুরতার নেতৃত্বাধীন একটি দল দেখায় যে, দেশের বিভিন্ন অংশেই বর্ষার চরিত্র বদল হয়েছে। সেখানেই দেখা গিয়েছিল, উত্তরাখণ্ডের চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, বাগেশ্বর, নৈনিতাল, হিমাচলের কুুলু— এই এলাকাগুলিতে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি বেড়েছে। দেশের অন্যান্য অংশেও দেখা গিয়েছে, এক দিকে শুষ্ক দিনের সংখ্যা (বর্ষার মরসুমে যে দিন বৃষ্টি হয় না) বেড়েছে, তেমনই আগের থেকে অনেক বেশি দিন ভারী বৃষ্টি মিলছে। পুলক বলছেন, “জলবায়ুগত বদলের ফলেই বর্ষার চরিত্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।”
মেঘভাঙা বৃষ্টির ক্ষেত্রে বিরাট আকারের উল্লম্ব মেঘ (যার আকার স্তম্ভের মতো) তৈরি হয়। মঙ্গলবারও উত্তরাখণ্ড, হিমাচলে তেমনই হয়েছিল। এর পিছনে দু’টি বিপরীতমুখী বায়ুস্রোতকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “পরস্পর বিপরীতমুখী ঠান্ডা এবং গরম হাওয়ার স্রোতের মিশ্রণেই এই উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয়েছিল।”
তবে এই বিপর্যয়ের পিছনে প্রকৃতির বিরূপ মনোভাব ছাড়াও উন্নয়নকেও দায়ী করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, জলবায়ু বদল এবং হিমালয়ের পরিবেশগত সংবেদনশীলতা— দু’টির কোনওটিকেই আমল না দিয়ে পাহাড়ে উন্নয়ন চলছে। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, “জলবায়ু বদলের পরিপ্রেক্ষিতে বিপর্যয় সহনকারী পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। এর পাশাপাশি হিমালয় পার্বত্য এলাকায় পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিত করাও জরুরি। এই কাজগুলি করা হলে তবেই ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তনও প্রয়োজন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)