Advertisement
E-Paper

চেন্নাইয়ের মাটিতে এক টুকরো উৎসবমুখর বাংলা

১৯২৯ সালে কর্মসূত্রে তৎকালীন মাদ্রাজে থাকা কতিপয় বাঙালি মিলে এই সংগঠন তৈরি করেছিলেন। প্রথম কয়েক বছর ঘর গুছিয়ে নিয়ে গিরি রোডের টি নগর বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনে ১৯৩৩ থেকে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৭

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে!

চেন্নাইতে বসে বাংলার এই প্রবাদবাক্যটি ভুলতে চান না তাঁরা। তাই বিশ্বকর্মা, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজো থেকে রাখি, দোল সবই হইহই করে পালন হয় দক্ষিণ ভারতের মাটিতে। এই সব কিছুই বেশ কয়েক দশক ধরে করে চলেছেন চেন্নাইয়ের ‘টি নগর বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যরা।

এঁরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। প্রায় ৪০০টি পরিবার নিয়ে এই সংগঠন। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের প্রতিটাই তাঁরা পালন করেন অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে। সরস্বতী পুজোর সকালে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে অঞ্জলি দেয় কিশোর-কিশোরীরা। চলে হাতেখড়ির পর্বও। পয়সা বৈশাখ ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি আর মেয়েরা তাঁতের শাড়ি পরে বর্ষবরণ করেন। দুর্গাপুজোয় ধুনুচি নাচ, বিজয়ায় সিঁদুর খেলা, কিছুই বাদ পড়ে না। এ সময়ে ভুলেও ভিটেমুখো হন না সংগঠনের সদস্যরা। সভাপতি অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বছরের অন্য সময়ে বাড়ি যাই। কিন্তু পুজোতে এখানেই থাকি।’’

১৯২৯ সালে কর্মসূত্রে তৎকালীন মাদ্রাজে থাকা কতিপয় বাঙালি মিলে এই সংগঠন তৈরি করেছিলেন। প্রথম কয়েক বছর ঘর গুছিয়ে নিয়ে গিরি রোডের টি নগর বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনে ১৯৩৩ থেকে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো।

এ বছর সেই পুজোর ৮৪ বছর। মহালয়ার দিন ভোরে বাংলার রেডিওতে যখন সকলে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে ব্যস্ত, তখন বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা মুখিয়ে থাকেন, কতক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ৭টা বাজবে। তখনই তো সংগঠনের নিজস্ব অডিটোরিয়ামে শুরু হবে ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’। তবে গত বছর চেন্নাই রেডিওতেও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী শোনানোর ব্যবস্থা করেছে সংগঠন।

মূর্তি গড়া হয় সংগঠনেরই দোতলা বাড়ির পিছনের দিকে। প্রতি বছর হুগলি থেকে আনা হয় মৃৎশিল্পী। ইডলি-দোসার দেশের পুজোয় ভোজনরসিক বাঙালির রসনাকে বঞ্চিত করতে নারাজ কর্মকর্তারা। পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায় আয়োজন হয় আনন্দমেলার। মহিলারা তৈরি করেন ঘুগনি, মালপোয়া, ফিশ কবিরাজি ও আরও নানা বাঙালি খাবার। রীতিমতো চেখে দেখে তা কিনে নেন সকলে।

কলকাতার পুরোহিতের হাত ধরে ষষ্ঠীর সকালে দেবীর বোধন। তার পর প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নাটক-নাচ-গানে ভরপুর থাকে অডিটোরিয়াম। সঙ্গে পুরোদস্তুর বাঙালি খাওয়াদাওয়া। সকালে প্রায় দেড় হাজার মানুষ পাতপেড়ে ভাত, ডাল, খিচুড়ি, বেগুনি, লাবড়া, রসগোল্লা খান। রাতে ফের খাওয়াদাওয়া। রান্নার জন্য কোন্নগর থেকে পাচক নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জনের পরে কোলাকুলির সঙ্গে চলে মিষ্টিমুখ।

শুধু পুজো বা অনুষ্ঠান করেই বাঙালিয়ানাকে ধরে রাখতে চান না এই সংগঠনের সদস্যরা। তাই বাংলা থেকে চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়া মানুষদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দেন তাঁরা। সম্পাদক মলয় রায় বললেন, ‘‘বাঙালি কি তার বাংলাকে ভুলতে পারে! তাই তো এত কিছুর ব্যবস্থা। সংগঠনের ওয়েবসাইট দেখলেই সব তথ্য মিলবে।’’

Durga Puja 2017 Durga Puja দুর্গোৎসব ২০১৭
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy