নেপাল-বাংলাদেশ তো বটেই, মায়ানমারের ভোটারও ধরা পড়েছে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে গিয়ে। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গত কাল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সব রাজ্যের নির্বাচনী কমিশনারদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে-রাজ্যে যখন তালিকা সংশোধনের কাজ হবে, তখন কোনও বিদেশি যাতে স্থান না পান, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি বিহারে সংশোধনের কাজ চলার সময়ে ভুয়ো খবরের বান ডেকেছিল। এতে আমজনতা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপচেষ্টা রুখতে সব রাজ্যের নির্বাচনী দফতরের ‘মিডিয়া ও কমিউনিকেশন’ আধিকারিকদের এক দিনের কর্মশালায় যোগ দিতে আগামিকাল দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের মতে, গত কালের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মুখ্য নির্বাচকদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়— এক জনও যোগ্য ভারতীয় নাগরিকের নাম যেমন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না, তেমনই এক জন বিদেশির নামও যেন তালিকায় না থাকে। দেশের প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারীদের কোনও ভূমিকাই থাকতে পারে না। কমিশনের পর্যবেক্ষণ, অনেক অনুপ্রবেশকারীর কাছেই আধার-ভোটার কার্ড রয়েছে। তাই সন্দেহজনক ব্যক্তির বা সেই ব্যক্তির পিতা-মাতার নাম দু’দশক আগেকার এসআইআরে রয়েছে কি না, তা চিহ্নিত করার জন্য কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ যাতে রাজ্যগুলি দেয়, তা নিশ্চিত করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
বিহারের ভোটের পরেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের কাজে হাত দেবে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মতে, সঠিক ভাবে যদি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে অন্তত দু’কোটি ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যাওয়া উচিত। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি ও মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা! বিজেপির দাবি, শাসক দল তৃণমূলের বদান্যতায় ওই অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশের ভোটার কার্ড রয়েছে এবং তাঁরা তৃণমূলকেই ভোট দিয়ে থাকেন। এঁদের নাম বাদ পড়লে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই রয়েছে। ফলে কমিশন যে বিদেশিদের ধরে ধরে চিহ্নিত করার যে ফরমান দিয়েছে, তাতে স্বস্তি জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘তালিকা সংশোধন যদি ঠিক ভাবে হয়, তা হলে অন্য রকমের ভোট হবে এ বার। কমিশনের উপরে বিজেপির পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ১২তম নথি হিসাবে আধার কার্ডকে গণ্য করার কথা বলেছে। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, বহু ভুয়ো ভোটারের আধার কার্ড রয়েছে। ভোটার কার্ডও রয়েছে। কিন্তু ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় সেই সব ভুয়ো ভোটারের নাম বা তাদের পিতা-মাতার নাম আসবে কী করে? ফলে পুরনো-নতুন তালিকা মেলালেই দুধ-জল আলাদা হয়ে যাবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)