এসআইআর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিঠির দু’টি দাবির একটিও মেনে নিচ্ছে নানির্বাচন কমিশন।
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ভোটার এবং বিএলও-দের মৃত্যু-আত্মহত্যার কারণ দেখিয়ে এসআইআর স্থগিত রাখার দাবি জানালেও কমিশন মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গে সময়ের আগেই যাবতীয় গণনাপত্রের (এনুমারেশন ফর্ম) ডিজিটাইজ়েশন-এর কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে কমিশনের কাছে দরবার করতে যাচ্ছেন। তাঁরাও রাজ্যে ভোটারদের ভোগান্তি, বিএলও-দের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যার কথা তুলে ধরবেন। তার ২৪ ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন সূত্রের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গ গণনাপত্র ডিজিটাইজ়েশনের কাজে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়ের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
গত ২৪ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কেন ঠিকাকর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না? কেন বেসরকারি আবাসনের মধ্যে কমিশন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র চালু করতে চাইছে? দিল্লির নির্বাচন সদন সূত্রের খবর, এই দু’টি ক্ষেত্রেই কমিশন নিজের অবস্থানে অনড় থাকবে। কারণ, এর একটিও ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলে মনে করছে না তারা।
কমিশন সূত্রের বক্তব্য, প্রথমত, যে সব বড় বেসরকারি আবাসনে বহু পরিবার থাকে, সেখানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র তৈরি হবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, আগামী বছর কেরল-তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যেও তা করা হবে। দ্বিতীয়ত, এসআইআর-এর কাজের জন্য ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে শুধু স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হবে। কোনও ভাবেই ঠিকাকর্মীদের কাজে লাগানো হবে না। কারণ, তা করা হলে তৃণমূল কংগ্রেস নিজের ক্যাডারদের সেই কাজে ঢুকিয়ে দিতে পারে।
মমতা গত ২০ নভেম্বর প্রথম বার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তিনি কাজের চাপে বিএলও-দের মৃত্যু, আত্মহত্যার মতো ঘটনা তুলে ধরে প্রস্তুতির অভাবের কথা বলেন, এসআইআর স্থগিত রাখার দাবি জানান। নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৮২.৯১ শতাংশ বা ৬ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি ভোটারের গণনাপত্রের ডিজিটাইজ়েশন হয়ে গিয়েছে। সময় রয়েছে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তৃণমূলের অভিযোগ, বিএলও-রা ফর্ম ডিজিটাইজ়েশন-এ সমস্যায় পড়ছেন। কমিশনের পাল্টা যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি দিন এই কাজ প্রবল গতিতে এগোচ্ছে। ৯৯.৮ শতাংশ ভোটার এনুমারেশন ফর্ম পেয়েছেন। বুধবার পর্যন্ত ৭৮.৪২ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজ়েশন হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৮২.৯১ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজ়েশন হয়ে গিয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে, গত দশ দিনে কাজের গতি প্রবল হারে বেড়েছে। আরও আট দিন বাকি। এই গতিতে কাজ এগোলে ৪ ডিসেম্বরের সময়সীমার আগে কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে।
শুধু তৃণমূল কংগ্রেসই নয়, এসআইআর-এ ১২টি রাজ্যে মোট ২৬ জন বিএলও-র মৃত্যুর অভিযোগ তুলে আজ কংগ্রেস বলেছে, এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন দায়ী। যদিও বিএলও-দের কাজের চাপ নিয়ে কমিশনের এক শীর্ষকর্তার যুক্তি, বিহারেও এক মাসের মধ্যে এসআইআর-এর কাজ হয়েছিল। কোনও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। সেখানে রাজনৈতিক দলের এজেন্ট বা বিএলএ-রা সক্রিয় ছিলেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, গুজরাতের মতো রাজ্যে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপির মতো ক্যাডার নির্ভর পার্টি সক্রিয় বলে বিএলএ-রা সক্রিয়। তাঁরা বিএলও-দের সঙ্গে ঘুরছেন। ফলে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। তাঁর আরও বক্তব্য, সত্যিই কত জন বিএলও এসআইআর-এর কাজের চাপে আত্মহত্যা করেছেন, তা রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে। শুক্রবার তৃণমূলের প্রতিনিধিরা অবশ্য মৃত্যু-আত্মহত্যার জন্য নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করতে চাইবেন। কমিশন পাঁচ জনের নাম পাঠাতে বললেও তৃণমূল দশ জন সাংসদের নামই পাঠিয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, দশ জন সাংসদই যাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)