কয়লা পাচারের দ্বিতীয় মামলাতেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা 'এমজি'-র নাম উঠে এসেছে বলে দাবি ইডি-র। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, এর আগে রাজ্যের কয়লা পাচারের মামলায় অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার অফিস তল্লাশি করে কিছু নথি পাওয়া গিয়েছিল যা থেকে জানা গিয়েছিল যে প্রতি মাসে ১০ লক্ষ টাকা ওই ‘এমজি’ নামে প্রভাবশালীর কাছে গিয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। এ বার ঝাড়খণ্ডের খনি থেকে কয়লা পাচারের মামলাতেও ‘এমজি’-র কাছে টাকা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এত কিছু জানা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরেও ওই প্রভাবশালীকে ইডি গ্রেফতার করেনি কেন? যদিও ইডি সূত্রের দাবি, এমজি-র বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে এ রাজ্যে কয়লা পাচারের তদন্ত শুরু করেছিল ইডি। তাদের দাবি, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম, পুরুলিয়ায় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশের কর্তাদের একাংশের যোগসাজষশে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কয়লা বেআইনি ভাবে ইসিএল-এর খনি থেকে তুলে পাচার করা হয়েছিল। কোটি-কোটি টাকার রাজস্বও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় বিভিন্ন নেতা এবং পুলিশের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। কয়লা মাফিয়া এবং একাধিক ইসিএল কর্তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে সেই মামলা চলছে।
ইডি-র এক কর্তা বলেন, "ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার বিভিন্ন অফিস থেকে নথি উদ্ধার করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল যে লালার হিসাবরক্ষক প্রতি মাসে ‘এমজি’ নামে এক প্রভাবশালীকে মাসে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ‘বাবুদা’ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। লালার হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমজি-কে শনাক্ত করা হয়েছিল। তারপর দিল্লিতে ওই ব্যক্তিকে তলব করেছিলাম আমরা।’’ সূত্রের খবর, প্রথমে ‘এমজি’ নামে ওই ব্যক্তি হাজিরা এড়ালেও ইডি আদালতে লালার ডায়েরির পাতা পেশ করায় তিনি তদন্তকারীদের সামনে হাজির হন। কলকাতার ইডি অফিসেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তিও নজরে এসছে বসে ইডি-র দাবি।
ইডি সূত্রের দাবি, এ রাজ্যে বেআইনি ভাবে কয়লা তোলা নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ায় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ঝাড়খণ্ডের বিসিসিএল-এর আওতাধীন খনি থেকে বেআইনিভাবে কয়লা তুলে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পাচার শুরু হয়। ঝাড়খণ্ডের কয়লা মাফিয়া, এ রাজ্যের রাজনৈতিক নেতা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজ্য পুলিশের একাংশের যোগসাজশে রীতিমতো ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি হয়। গত চার বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার কয়লা পাচার করা হয়েছে বলেও ইডি সূত্রের দাবি। ২০২৩ সালে ঝাড়খণ্ড এবং রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা থানার কয়লা পাচারের বেশ কয়েকটি রাজ্য পুলিশের দায়ের করা এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা (ইসিআইআর) রুজু করে তদন্তে নামে ইডি। সেই মামলায় সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, দুমকা এলাকা ও এ রাজ্যের কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্যবসায়ীর বাড়ি, অফিস এবং গুদামে তল্লাশি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার মূল্যের বেআইনি কয়লা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই কয়লা ব্যবসায়ীদের অফিস থেকে বহু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ফেরার থাকায় তাঁদের কর্মচারী ও হিসাবরক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ইডি-র এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকার কয়লা মাফিয়ার অফিস থেকে বহু নোটবুক এবং ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সেখানেও ‘এমজি’ নামে ওই ব্যক্তিকে মাসে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা আছে। এমজি-র নামে টাকা কয়েকজন ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ আছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)