বিহার বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। সেই সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে খবর করতে বালিয়ায় গিয়েছিলেন ইউটিউব-সাংবাদিক অজিত আঞ্জুম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তাঁর ক্যামেরা দল বিনা অনুমতিতে একটি ভোট কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন এবং বুথ লেভেল অফিসারকে (বিএলও) কাজে বাধা দেন। ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি আধিকারিককে কাজে বাধা, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর মতো অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে। যদিও সাংবাদিকের দাবি, নির্বাচন কমিশনের কাজে গাফিলতি-সংক্রান্ত ভিডিয়ো সম্প্রচার করাতেই এই কোপ। এফআইআর দায়েরের নিন্দা করে ১৬ জুলাই প্রেস বিবৃতি দিয়েছে ‘এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া’।
আনন্দবাজারের কাছে ফোনে অজিতের দাবি, ‘‘গোটা ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং আমার কাছে রয়েছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, কারও কাজে বাধা দিইনি। যে বিএলও-কে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি শান্ত ভাবেই জবাব দিচ্ছিলেন।’’ যদিও এই বিএলও-ই পরে অভিযোগ দায়ের করেন।
অজিত জানালেন, বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষা (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) সংক্রান্ত খবরের খোঁজে তিনি ১২ জুলাই বালিয়া ব্লকের এক ভোটকেন্দ্রে যান। দাবি, তিনি ভিডিয়ো রেকর্ডের অনুমতি নিয়েই ঢুকেছিলেন। ক্যামেরা অন থাকা অবস্থায় কত জন ভোটারের নাম সংশোধিত তালিকায় তোলা হল, সব ভোটারেরা ফর্ম পূরণ করে ঠিক মতো জমা করেছেন কি না, ওই কেন্দ্রে কত শতাংশ মুসলিম ভোটার এবং কত শতাংশ হিন্দু ভোটার, এমন নানা বিষয়ে বিএলও-কে প্রশ্ন করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিএলও তাঁকে জানান, ৯০ শতাংশ মুসলিম ভোটার এবং ১০ শতাংশ হিন্দু ভোটার সেখানে। বিএলও জানান, ওই কেন্দ্রের সব ভোটার প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য পূরণ করেই ফর্ম জমা করেছেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সব ভোটারেরাই ফর্ম পুরো এবং ঠিকঠাক ভরে ফেললেন? ওই আধিকারিক জানান— ‘লোক জাগরুক হ্যায়।’
সেই সময়ে ওয়েবসাইটে ভোটারের ফর্ম ‘আপলোড’ করছিলেন সুপারভাইজ়ার। কিন্তু অজিতের দাবি, তিনি দেখতে পান, অসমাপ্ত ফর্মই তোলা হচ্ছিল। এক মহিলা আধিকারিক জানান, এখানে তাঁর কিছু করার নেই। ভোটারের বাড়ি গিয়ে ফর্ম ঠিকমতো পূরণ করিয়ে আনানোর দায়িত্ব বুথ লেভেল অফিসারের। অজিতের দাবি, ‘‘আমি ফাঁকা ফর্মগুলো হাতে তুলে ওঁকে দেখাচ্ছিলাম। তখনই এক সরকারি কমী এসে বলেন, এ সব রেকর্ড করা চলবে না। আমি বেরিয়ে আসি।’’
অজিত জানান, তিনি কেন্দ্র থেকে বেরনোর দশ মিনিটের মধ্যে বিডিও এবং পরে এসডিএম-এর ফোন আসে। দু’জনেই ভিডিয়ো মুছে ফেলার অনুরোধ করেন। তবে তিনি ওই দিনই তা দেখান ইউটিউবে। এর ২৪ ঘণ্টা পরে ডিএম-এর দফতর থেকে প্রেস বিবৃতিতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর পরিবেশনের অভিযোগ করা হয়। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে জামিন অযোগ্য ধারায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। অজিতের দাবি, ‘‘আইনজীবীরা ওই ভিডিয়ো দেখে জানিয়েছেন, অসাংবিধানিক কাজ করিনি। একটি এলাকার জনবিন্যাস প্রসঙ্গে জানতেই হিন্দু ও মুসলিম ভোটারের শতাংশ জানতে চেয়েছিলাম।’’
বিহারে বিধানসভা ভোটের মুখে তড়িঘড়ি ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠেছে। অজিত বলেন, ‘‘বুধবার তিন মিনিটের নতুন ভিডিয়ো প্রকাশ করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে পটনা জেলার ফুলওয়ারি শরিফের একটি ঘরে বিএলও-রা লিংক থেকে নাম বের করে ফাঁকা ফর্মে নিজেরাই নাম লিখছেন, ভোটারদের জায়গায় সই করছেন। রাহুল গান্ধী ওই ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন। মাটিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতা করি, একেবারেই ভয় পাচ্ছি না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)