E-Paper

বাতিলদের নিয়ে ফাঁপরে এখন সব দল, কমিশনও

বিহারে এসআইআর-এর প্রথম-পর্ব শেষে খসড়া ভোটার তালিকায় বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম। সেই খসড়ার উপরে আপত্তি বা আবেদন জানানোর সময়-সীমা শেষ হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪০
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।

খসড়া ভোটার তালিকায় আপত্তি বা সংশোধনের আবেদন জানানোর জন্য হাতে আর সময় এক সপ্তাহ। বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ নির্দেশের পরে এই অল্প সময়ে প্রবল চাপে পড়েছেন বুথ লেভল অফিসার (বিএলও) এবং বুথ লেভল এজেন্টরা (বিএলএ)। অর্থাৎ একই সঙ্গে চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলিও!

বিহারে এসআইআর-এর প্রথম-পর্ব শেষে খসড়া ভোটার তালিকায় বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম। সেই খসড়ার উপরে আপত্তি বা আবেদন জানানোর সময়-সীমা শেষ হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর। সূত্রের খবর, এসআইআর নিয়ে মামলায় সর্বোচ্চ আদালত ভোটারের নথি হিসেবে আধার কার্ডকেও মান্য করতে বলার পরে আবেদনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। অনলাইনেও আবেদন আসছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিএলও-দের এখন ভোটারের নথি যাচাই করে ভোটার তালিকার জন্য চূড়ান্ত নাম জমা দিতে হবে। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, আধার কার্ডকে মান্যতা দিতে বলে কমিশনের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক নির্দেশ তাঁদের পাঠানো হয়নি। আবেদন-প্রক্রিয়ায় সময়ও বাড়েনি। পটনার এক বিএলও-র কথায়, ‘‘আধার কার্ড নথি হিসেবে নিতে হবে, এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে, আমরা সবাই দেখেছি। মৃত বাদে অন্যান্য কারণে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই আধার কার্ড দিয়ে ফের আবেদন করছেন। এখন এত কম সময়ে বিএলও-দের পক্ষে এত আধার কার্ড পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব?’’

তালিকার কাজে নিযুক্ত বিএলও-রা সমস্যায় পড়ে আঙুল তুলছেন রাজনৈতিক দলের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, স্থানীয় স্তরে বিএলএ-রা ভোটারের নথি যাচাইয়ে সহায়তা করলে কাজের সুবিধা হত। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের তরফে ৯টি আবেদন ছাড়া দলীয় বিএলএ-রা (বিহারে এই প্রক্রিয়ায় মোট এক লক্ষ ৬০ হাজার ৮১৩ জন বিএলএ যুক্ত) কেন বাদ পড়া ভোটারদের নিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আপত্তি বা আবেদন জমা দেননি, সেই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরেও আনা হয়েছিল। রাজনৈতিক দলের নেতারা আবার পাল্টা দাবি করছেন, নথি যাচাই করার দায়িত্ব কমিশনেরই। চাপে পড়ে তারা রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে বন্দুক রাখতে চাইছে!

এই বিতর্কের মধ্যে আধার নিয়ে উচ্চবাচ্য না-করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নোটিস পাঠাতে শুরু করেছেন বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) বিনোদ সিংহ গুঞ্জিয়াল। সিইও দফতর সূত্রের বক্তব্য, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ৬টি জাতীয় ও ৬টি রাজ্য স্তরের দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দিয়ে জানাতে হবে ভোটারের সুবিধার্থে তাঁদের দলের প্রতিনিধিরা কী ভূমিকা নিয়েছেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ওই দলগুলির নেতৃত্বকে আদালতে হাজির হতেও বলা হচ্ছে। সিইও দফতর সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে রেখেই কমিশন শুরু থেকে এই বিশেষ সংশোধনের কাজ করতে চেয়েছে। কিন্তু বাইরে যা প্রতিবাদ হচ্ছে, বুথ স্তরে সে ভাবে সমন্বয় হচ্ছে না।

বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষ নাম নিয়ে যখন এই টানাপড়েন তুঙ্গে, তার পাশাপাশি খসড়া তালিকায় থাকা ৭ কোটি ২৪ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৯৮.২%-ই ইতিমধ্যে তাঁদের নথি জমা দিয়েছেন বলে জানানো হচ্ছে কমিশনের তরফে। অর্থাৎ বাকি ৭ দিনে খসড়া তালিকার দুই শতাংশেরও কম ভোটারের নথি জমা পড়া বাকি থাকছে। কমিশনের বক্তব্য, নথি যাচাই সম্পূর্ণ করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিহারের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেই এখনও ঠিক আছে।

কিন্তু এর মধ্যে কি বাদ পড়ে আবেদন করা সকলের নথি যাচাইয়ের কাজ হয়ে যাবে? শেখপুরার এক বিএলও-র মতে, ‘‘রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ কার্যত অসম্ভব! একে তো নথি নিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে নানা রকম বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে। তার উপরে তালিকায় থাকা এবং বাদ পড়ে আবেদনকারী, দু’রকম ভোটারের নথি যাচাই একসঙ্গ করা কঠিন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Special Intensive Revision Bihar Voter List Controversy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy