বিতর্কের মাঝে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্বাচন কমিশন। বলা হল, এখনই নথি দিতে হবে না। যে ফর্ম দেওয়া হয়েছে, আগে সেটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। নথি লাগবে, তবে তা পরে দিলেও চলবে। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর থেকে রবিবার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও তা নিশ্চিত করেছেন। মনে করা হচ্ছে, বিতর্কের মাঝে আগের অবস্থান থেকে খানিক সরে এল কমিশন।
রবিবার বিহারের একাধিক সংবাদপত্রে সিইও দফতরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আপনারা আপনাদের ফর্মগুলি ভরে নথি এবং ছবি-সহ যত দ্রুত সম্ভব বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) কাছে জমা দিন। যদি প্রয়োজনীয় নথি আপনাদের কাছে না থাকে, ফর্ম ভরে সই করে সেগুলি জমা দিন।’’ নতুন করে এ বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে মনে করা হচ্ছে, সাধারণের আতঙ্ক কাটাতেই বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের এই পদক্ষেপ। ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৬ জুলাই, আর দু’সপ্তাহ দূরে।
আরও পড়ুন:
জেলাশাসকদেরও সিইও দফতর থেকে আলাদা করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই বার্তায় রয়েছে, ‘‘সমস্ত জেলাশাসককে বলছি, আপনারা নথি ছাড়াই আপাতত ফর্ম জমা নিন। সর্বোচ্চ সংখ্যক ফর্ম যাতে জমা পড়ে, তা নিশ্চিত করুন। যাতে আমরা ড্রাফ্ট পাবলিকেশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার দেখাতে পারি। নথি পরে নেওয়া যাবে। সেগুলি পরে বিএলও ড্যাশবোর্ডে আপলোড করতে বলা হবে।’’ উল্লেখ্য, এই বিএলও ড্যাশবোর্ড এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। ড্যাশবোর্ড তৈরির কাজ চলছে।
গোটা প্রক্রিয়ায় বুথ লেভেল আধিকারিকেরাও হিমশিম খাচ্ছেন। এত কম সময়ে নথি-সহ এত ফর্ম জমা নেওয়া সম্ভব নয়, মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। বাঁকা জেলার এক বিএলও বলেছেন, ‘‘আমাদের দু’রকমের ফর্মই জমা নিতে বলা হয়েছে। যাঁরা নথি-সহ ফর্ম দিচ্ছেন, তাঁদেরটাও জমা নিচ্ছি। নথি ছাড়াও নিচ্ছি। শুধু তো ভোটারেরা এর ফলে আতঙ্কিত নন, আমরাও ভয়ে আছি। শুধু আমাকেই ১৩০০ ফর্ম জমা দিতে হবে। বেশ কিছু নথি যাচাই করতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ সম্ভব বলে তো মনে হচ্ছে না। সময়সীমা আরও যাতে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেই প্রার্থনা করছি।’’
শনিবার বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, ১ অগস্ট ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে। যাঁদের ফর্ম জমা পড়েছে, তাঁদের নাম সেই তালিকায় থাকবে।
চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সেখানে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বলা হয়েছে, যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় আছে, তাঁদেরও নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো সহজলভ্য নথি এ ক্ষেত্রে গণ্য হবে না। দেখাতে হবে জন্মের শংসাপত্র। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও ছাড় নেই। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। এ নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছে। এর ফলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন বলে আশঙ্কা। সুপ্রিম কোর্টেও একাধিক মামলা হয়েছে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে। মামলা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ মহুয়া মৈত্রও।