Advertisement
E-Paper

ভোটের মরসুমে প্রচারের হাতিয়ার ‘কেরলের নির্ভয়া’

দেহে ৩৮টা ক্ষতচিহ্ন। যৌনাঙ্গে গোটা বিশেক কাটাকুটি। বুকে, চিবুকে, গালে, মাথার পিছনে গভীর ক্ষত। যোনিপথ দিয়ে ঢোকানো লোহার রডের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে অন্ত্র। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছে, খুনের পরেও ধর্ষণ করা হয়েছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০৩:৩২

দেহে ৩৮টা ক্ষতচিহ্ন। যৌনাঙ্গে গোটা বিশেক কাটাকুটি। বুকে, চিবুকে, গালে, মাথার পিছনে গভীর ক্ষত। যোনিপথ দিয়ে ঢোকানো লোহার রডের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে অন্ত্র। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছে, খুনের পরেও ধর্ষণ করা হয়েছে।

অত্যাচারের বর্ণনা শুনলে চার বছর আগের ডিসেম্বরের রাতে দিল্লির বাসে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের কথা মনে পড়বেই। প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীর উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে গোটা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। পেরুমবাভুরের দলিত আইন ছাত্রীকে খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদেও কেরল ক্ষোভে ফেটে
পড়েছে। তিরুঅনন্তপুরম, আলাপ্পুঝা, কোচি, কান্নুর, ত্রিচূড় থেকে ফেসবুক-টুইটার, সর্বত্র ‘কেরলের নির্ভয়া’-র ছবি-সহ পোস্টার ও বিচারের দাবি। মোমবাতি মিছিল। ভোটের বাজারে তার ফায়দা তুলতে নেমে পড়ছে
সব দলই।

পেরুমবাভুরের ভট্টিলোপ্পডি খালের ধারে এক কামরার ঘর। তাতেই মায়ের সঙ্গে থাকতেন ২৮ বছরের ওই তরুণী। মা-ই এদিক-ওদিক কাজ করে দু’জনের পেট চালানোর বন্দোবস্ত করতেন। ওকালতি করে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল আইনের ছাত্রীর। তা আর হল না।

২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মা রাজেশ্বরী বাড়িতে ফিরে দেখেন, রক্তে মাখামাখি মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। দু’ঘন্টা পরে পুলিশ আসে। মোবাইলের আলো জ্বেলে এক নজর দেখে ফিরে যায়। ঘটনাস্থলে পাহারা বসানো হয়নি। ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ তো দূরের কথা। পরের দিন ময়নাতদন্ত সেরে তাড়াহুড়ো করে দাহ করে ফেলা হয়। এর্নাকুলামের জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট পাঠামো হয়নি। আইনের তোয়াক্কা না করে, পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ধর্ষিতা তরুণীর নাম, ছবিও প্রকাশ করে দেয় পুলিশ।

তার পরে দু’সপ্তাহ কাটতে চললেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এখন গোটা এলাকার পুরুষ বাসিন্দাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ চলছে। মানসিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে রাজেশ্বরী এখন মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘মেয়ে খেয়েছে কি? কলেজে গিয়েছে?’ রাজেশ্বরীকে দেখতে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের জাতীয় ও রাজ্য স্তরের নেতাদের লাইন পড়েছে। সিপিএম-বিজেপি উমেন চান্ডি সরকার ও পুলিশের দিকে ব্যর্থতার আঙুল তুলেছে। রাজেশ্বরীর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ চেন্নিথালা। পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ও মৃতার দিদির জন্য সরকারি চাকরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ভোটের আদর্শ আচরণবিধির গেরোয় তা নির্বাচন কমিশনের ছাড়পত্র পায়নি।

রাজনীতিকদের কনভয়ের যানজট কাটিয়ে পেরুমবাভুরে পৌঁছে দেখা গেল ডেপুটি পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে লাগাতার ধর্না চলছে। নির্যাতিতার নাম করেই স্লোগান উঠছে। দিল্লির ঘটনায় তরুণীর পরিচয় গোপন রাখতে ‘নির্ভয়া’ নাম দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। মানুষের মুখে মুখে সেই নামটাই ফিরেছে। এখানে সে সব রাখঢাক নেই। কলেজ ছাত্রী জে নন্দিতা যুক্তি দিলেন, ‘‘আসলে ওর নামটাই ভীষণ নাড়া দিচ্ছে। পরিচয় গোপন রেখে কী হবে? ও তো আর বেঁচেই নেই।’’

রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার পরে দলিতদের নিয়ে ব্যাকফুটে থাকা বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে চাইছে। অমিত শাহ রাজেশ্বরীর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন।

প্রচারে এসে কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাস্থল ঘুরে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়মন্ত্রী তাহয়ার চাঁদ গহলৌত দাবি করেন, দলিতদের নির্যাতন-বিরোধী কোনও আইনই মানেনি সরকার। একই সুর সিপিএমেরও। এর্নাকুলাম জেলা সম্পাদক পি রাজীব বলেন, ‘‘আসলে সামনে ভোট বলে কংগ্রেস সরকার গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা ছেড়ে দেব না।
আন্দোলন চলবে।’’

রাজনৈতিক নেতারা মানছেন, ভোট চলছে বলেই দলিত ছাত্রীর খুন-ধর্ষণ থেকে মাঝে মাঝেই বিতর্কের নজর অন্য বিষয়ে ঘুরে যাচ্ছে। মোদী বনাম সনিয়া, দুর্নীতির মতো বিষয়ও সামনে চলে আসছে। পেরুমবাভুরের আন্দোলনকারীদের স্লোগান মাঝে মাঝেই চাপা পড়ছে ভোটপ্রচারের মাইকের শব্দে। অন্য অনেক কিছুর মতো ভোটের লড়াইয়ের অস্ত্র হয়ে উঠছেন ‘কেরলের নির্ভয়া’।

kerala nirbhaya Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy