১২ হাজার বছর ঘুমিয়ে থাকার পর হঠাৎই জেগে উঠেছে ইথিয়োপিয়ার হায়েলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি। অগ্নুৎপাতের জেরে ছাইয়ের কুণ্ডলী মেঘের সঙ্গে মিশে লোহিত সাগর পেরিয়ে উড়ে আসছে এশিয়া মহাদেশে। সালফার ডাইঅক্সাইডমিশ্রিত ঘন ছাইমেঘ (অ্যাশ ক্লাউড) পশ্চিম দিক থেকে প্রথমে ভেসে এসেছিল গুজরাতে। তার পর তা ধীরে ধীরে রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।
কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল ছাই
আগ্নেয়গিরিটির উৎপত্তি যেখানে, সেই জায়গাটি ইথিয়োপিয়ার রাজধানী আড্ডিস আবাবা থেকে ৮০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এলাকাটি পূর্ব আফ্রিকার আর এক দেশ ইরিত্রিয়ার সীমান্তবর্তী। রবিবার দুপুর ১টায় (ভারতীয় সময় অনুসারে) প্রথম অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। ১৪ কিলোমিটার উচ্চতাতেও পৌঁছে যায় ছাইমেঘ। অগ্ন্যুৎপাতের পর প্রথমে ছাইমেঘ লোহিত সাগর পেরিয়ে পৌঁছেছিল ইয়েমেনে। তার পর ওমান হয়ে তা পৌঁছোয় ভারত এবং পাকিস্তানে।
ভারতের কোন কোন শহরে প্রভাব
আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন অগ্ন্যুৎপাতের ছাই দিল্লি ছাড়িয়ে পৌঁছোবে উত্তরপ্রদেশেও। এমনকি তা হিমালয় কিংবা তরাই অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছাই, সালফার-ডাই-অক্সাইড, খনিজ পদার্থ মিশ্রিত মেঘপুঞ্জ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ক্রমশ উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। ভারতের আবহবিজ্ঞান দফতর (আইএমডি)-এর ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ছাইমেঘ পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে চিনের দিকে যাবে।
আরও পড়ুন:
দিল্লিতে কী প্রভাব
বিষাক্ত ধোঁয়ায় এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা দিল্লিবাসীর। তার উপর এই ছাইমেঘ রাজধানীর বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) আরও খারাপ করবে কি না, তা নিয়ে আতঙ্ক দেখা গিয়েছে। আইএমডি অবশ্য আশার কথা শুনিয়ে জানিয়েছে, বিষমেঘ রয়েছে ভূপৃষ্ঠের অন্তত ১৫০০০ থেকে ৪৫০০০ ফুট উঁচুতে। তাই বাতাসের নিম্নস্তরে এর প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর মেঘ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন আবহবিদেরা। তবে জনস্বাস্থ্যে ছাইমেঘের প্রতিকূল প্রভাবের সম্ভাবনা কম থাকলেও সোমবার রাত থেকে এর প্রভাব পড়েছে বিমান পরিষেবায়। ছাইমেঘের জেরে কেরলের কন্নুর থেকে আবুধাবিগামী ইন্ডিগোর ৬ই১৪৩৩ বিমানের যাত্রাপথ বদলে দিতে হয়েছে। ওই সংস্থার আরও পাঁচটি বিমান বাতিল হয়েছে। সোমবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ১১টি বিমান বাতিল হয়েছে। ‘আকাসা এয়ার’ জানিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ায় যাওয়ার বিমানগুলি আপাতত তারা বাতিল করছে। আইএমডির তরফে জানানো হয়েছে, ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তাই ছাইমেঘ থিতু হওয়ার সুযোগ পাবে না। তবে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে বৃষ্টি হলে ছাইমেঘে থাকা উপাদান বায়ুমণ্ডলে থেকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহবিদরা মনে করছেন দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা আংশিক ব্যাহত হওয়া ছাড়া এর কোনও প্রভাব আবহাওয়া বা জনস্বাস্থ্যের উপর পড়বে না।