বর্ষা আসছে—কোথায় ছাতা, বর্ষাতি, স্যান্ডাল এ সব গুছিয়ে রাখব, প্রস্তুত হব মুম্বইয়ের দুরন্ত বৃষ্টি-দিনগুলোর জন্য—তা নয়, এই বৃষ্টি দিনে অন্য রকম কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, আপনাদের মাঝে মাঝে মনে হয় না কোন এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় মুড়ি তেলেভাজা সহযোগে বসি পরিবারের আর সকলের সঙ্গে। সেখানে হয়তো থাকতে পারে আরও কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় পরিজন। বাইরের নীরবতা ভেঙে দিচ্ছে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ— মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি ফালা ফালা করে দিচ্ছে অন্ধকারকে। এমন সময় হঠাৎ নিভে যায় ঘরের আলো। লোডশেডিং না কি ফিউজ গেল তা কে জানে! কেন পাওয়ার কাট, তার কারণ না হয় পরেই অনুসন্ধান করা যাবে। আগে তো একটা মোমবাতি জ্বালা হোক। মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় ঘরের ছায়াগুলো নড়তে থাকে। জানালা দিয়ে ধেয়ে আসা হাওয়ায় মোমবাতিও নিভু-নিভু। ঘর জুড়ে যেন কী এক রহস্যের উদ্ভাস। জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখা তো এমনই ছায়া-ছায়া, অস্পষ্ট, বৃষ্টিদিনের মতো মেঘ-আবরণে ঢাকা। কেউ বলতে পারে না কোথায় জীবনের শেষ আর মৃত্যুর আরম্ভ।
গল্প শুরু হয়। গল্প না কি ঘটনা না কি মানবমনের বিচিত্র পথ বেয়ে বয়ে আসা অজানিত শঙ্কা?
আসুন, সুধিজন, আমরা ডুব দিই সেই সব রহস্য কাহিনীতে।
অনেক অনেক দিন আগে বাল্টিমোরের এক প্রতিবেশী শহরে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। সেই শহরের এক নামকরা আইনজ্ঞের স্ত্রী হঠাৎই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর রোগ নিরাময়ে ব্যর্থ হন। ভদ্রমহিলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অথবা বলা যায় আপাতদৃষ্টিতে মনে হল তাঁর জীবনের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর মৃত্যু হয়নি—এটা ভাবার কোনও কারণ ছিল না কারণ, তাঁর শরীরে মৃত্যুর সমস্ত লক্ষণ ছিল একেবারে স্পষ্ট। ঠোঁট সাদা, চোখের পাতা পলকহীন, নাড়ির গতি বন্ধ, দেহ বরফশীতল। তিন দিন ভদ্রমহিলাকে কবর দেওয়া হল না। ওই বরফশীত ও মৃত্যুকঠিন দেহটিকে এর পর তাদের পারিবারিক ভূগর্ভস্থ সমাধিকক্ষে সমাধিস্থ করা হল কারণ তা না হলে দেহে পচন ধরবে। তিন বছর এ ভাবেই ছিল দেহটি। তিন বছর পর এক দিন ভদ্রমহিলার স্বামী একটি শবাধারের জন্য ওই ভূগর্ভস্থ সমাধিকক্ষটি খুলতেই আতঙ্কে উঠে ছিটকে বেরিয়ে এলেন।
কী দেখলেন তিনি? ভেতরের দরজা খুলতেই সাদা পোশাক পরা একটা জিনিস হুড়মুড় করে তাঁর হাতের ওপর এসে পড়ল। এটা আর কিছু নয়—তাঁরই স্ত্রীর কঙ্কাল, শবাচ্ছাদনকারী বস্ত্রের দ্বারা আবৃত। কী করে ঘটল এমন ভয়াবহ অভাবনীয় ঘটনা?
অনুসন্ধান করে জানা গেল, ভদ্রমহিলাকে সমাধিস্থ করার দু’দিন পর তিনি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। কফিনের ভেতর থেকে ভদ্রমহিলার বেরনোর আপ্রাণ চেষ্টার ফলে উঁচু তাক থেকে পড়ে কফিনটি ভেঙে যায়। ভদ্রমহিলা কফিনের ভেতর থেকে বেরোতে সক্ষম হলেও সমাধিকক্ষের লোহার দরজায় বার বার আঘাত করেও তিনি কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। একটি লণ্ঠনকে মেঝেতে উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সম্ভবত ভদ্রমহিলার ধাক্কাধাক্কিতেই সেটি পড়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরও যখন দরজা খোলে না, তখন হতাশায়, ভয়ে ভদ্রমহিলা সম্ভবত প্রাণত্যাগ করেন। সমাধিকক্ষের লোহার দরজায় কোনও ভাবে আটকে যায় তাঁর সাদা আচ্ছাদন আর ওই অবস্থাতেই তিনি রয়ে যান তিন বছর। দেহে পচন ধরে এবং অবশেষে দেহটি পরিণত হয় একটি কঙ্কালে। আর একটি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ১৮১০ সালে ফ্রান্সে।