সাউথ ব্লক-নর্থ ব্লক যথেষ্ট সতর্ক তো? তা না হলে সন্ত্রাস ফিরতে পারে এ দেশেও। —ফাইল চিত্র।
ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ডানা যখন দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশের উপর গভীর ছায়া ফেলছে, ঠিক সেই সময় ফ্রান্সে বাস্তিল দিবসের সন্ত্রাসের ঘটনা কপালে বাড়তি ভাঁজ ফেলল সাউথ ব্লকের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলার ঘটনার ঠিক পরেই দ্রুত তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি তীব্রভাবে এই নারকীয় হামলার নিন্দা করছি। ভারতও এই বেদনাদায়ক ঘটনার অংশীদার। এই চরম দুর্দিনে ফরাসি ভাইবোনদের পাশে রয়েছে ভারত।”. রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সন্ত্রাসবাদ দমনে ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো হবে।”
বাংলাদেশের গুলশন কাণ্ডের পর জাপান, আমেরিকা এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে সন্ত্রাস বিরোধী সমন্বয় বাড়ানোর পথে হাঁটছে নয়াদিল্লি। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দৌত্য এবং তথ্য আদানপ্রদানের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের যে কোনও সীমান্ত নেই, এবং তথ্য প্রযুক্তির এই ডিজিটাল যুগে কেউই যে আর নিরাপদ নয়, এ কথা বিভিন্ন মঞ্চে বারবার বলেছে ভারত। এটাও ঘটনা, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতার প্রশ্নে আমেরিকার পাশাপাশি ফ্রান্সও কিন্তু ভারতের অন্যতম অংশীদার। গত নভেম্বরে প্যারিস হামলার পর এই সহযোগিতার গুরুত্ব আরও বাড়ে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তার মতে, “প্যারিস হামলা ঘটিয়েছিল যে জঙ্গি গোষ্ঠী সেই আইএস-এর পরবর্তী নিশানার মধ্যে রয়েছে ভারত। আজকের ঘটনার পিছনেও রয়েছে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের হামলার মডিউল আমাদের জন্য এক একটা অ্যালার্ম বেল-এরই সামিল।”
পাঁচ মাস আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁর ভারত সফরের সময় দুদেশের মধ্যে সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি সই হয়। কিন্তু সেই চুক্তিতে যে বিষয়গুলিতে ঐকমত্য হয় ভারত এবং ফ্রান্স তার মধ্যে বেশিরভাগই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি লাল ফিতের ফাঁস, অর্থমন্ত্রকের না-মঞ্জুরি এবং সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক সংশ্লিষ্ট কর্তার বক্তব্য, “আর দেরি না করে আপতকালীন ভিত্তিতে সন্ত্রাসবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলির বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে। না হলে পস্তাতে হবে নিজেদেরকেই।” ফ্রান্সের থেকে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনার ব্যাপারে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু তার পর গত ছ’মাস ধরে বিদেশমন্ত্রক একটাই কথা কাটা রেকর্ডের মত বাজিয়ে চলেছে যে, ‘সামান্য কিছু আর্থিক বিষয়ের’ জন্য এই কেনা-বেচা আটকে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি অর্থমন্ত্রকও।
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া ১০ ভয়াবহ জঙ্গিহানা
তবে আজকের ঘটনার পর বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে যে বিষয়গুলি নিয়ে চুক্তি হয়েছিল, তা দ্রুত রূপায়ণের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দু’দেশের মধ্যে ‘বার্ষিক কৌশলগত আলোচনা’র অংশ হিসাবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ-এর বৈঠক হওয়ার কথা। এ বার সেই বৈঠক যত শীঘ্র সম্ভব বসানোর চেষ্টা করা হবে। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে ফ্রান্সের সঙ্গে ওই বৈঠকে যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে তার মধ্যে রয়েছে হিংসাত্মক মৌলবাদী চিন্তাকে প্রতিহত করার কৌশল নির্ণয়, জঙ্গি রিক্রুটমেন্ট-এর প্রক্রিয়াটিকে শনাক্ত করে তাকে ভেস্তে দেওয়া, পর্যটকের ভেক ধরে জঙ্গিদের মুভমেন্ট আঁচ করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির অর্থসাহায্য বন্ধ করা, জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানোর লাইনটিকে বিচ্ছিন্ন করা, সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করার মত বিষয়গুলি। পাশাপাশি দুদেশের সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি করাকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি ভারত এবং ফ্রান্সের সেনার মধ্যে সন্ত্রাস বিরোধী এক্সসারসাইজ – ‘শক্তি’, শুরু হয়েছিল বছরের গোড়ায় বিকানেরে। সেটাকেও আরও ঘনঘন করা যায় কিনা সেই প্রস্তাব এবার প্যারিসকে দেবে নয়াদিল্লি।
প্যারিস থেকে পাঠানকোট — সন্ত্রাসবাদের দাপাদাপি বন্ধ করার জন্য সেদিন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদী এবং ওলাঁ। যৌথ বিবৃতির শেষে বলা হয়েছিল, দুদেশের গোয়েন্দা তথ্য, অর্থমন্ত্রক, আইন বিভাগ এবং পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে আদানপ্রদান আরও বাড়ানো হবে জঙ্গি তত্পরতা রুখতে।
আজ বাস্তিল দিবসে ফ্রান্স কেঁপে যাওয়ার পর আর দেরি না-করে কাজ শুরু করে দিতে চাইছে নয়াদিল্লি। কারণ সন্ত্রাস কাউকে ছেড়ে কথা বলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy