দিল্লি বিস্ফোরণের নেপথ্যে কি ফরিদাবাদ মডিউল? তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ,এই দুই ঘটনার মধ্যে কোনও না কোনও যোগ থাকতে পারে। তবে কী ভাবে এই যোগসূত্র তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ফরিদাবাদের বিস্ফোরক এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মহিলা চিকিৎসক শাহিন শহিদকে জেরা করে মিলেছে দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্রের আভাস মিলেছে।
উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা শাহিন। তবে কর্মসূত্রে থাকতেন ফরিদাবাদে। আল-ফালাহ্ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ছিলেন। ওই হাসপাতালে তাঁর সহকর্মীদের দাবি, তাঁরা কেউই বুঝতে পারেননি, শাহিন এ ধরনের কোনও চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর এক চিকিৎসক সহকর্মী এনডিটিভি-র কাছে দাবি করেন, কোনও শৃঙ্খলা ছিল না শাহিনের। প্রায়ই কাউকে কিছু না-জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যেতেন। তাঁর বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও করা হয়েছিল। তবে শাহিন কোনও ‘সন্ত্রাসমূলক’ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, সন্দেহ করেননি কেউই।
প্রসঙ্গত, সোমবার দিল্লির অদূরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে ৩৬০ কেজি আরডিএক্স তৈরির মশলা (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানায়, উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে মোট ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এত বিস্ফোরক কোথা থেকে এল? কী পরিকল্পনা ছিল? সেই সব বিষয় এখনও স্পষ্ট না-হলেও তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ভারতে কোনও বড়সড় নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল! আর সেই ছক কি কষছিলেন উমর উন নবি? দিল্লি বিস্ফোরণের নেপথ্যে তিনিই মূল সন্দেহভাজন।
তদন্তের স্বার্থে লালকেল্লা এবং তার আশপাশের অনেক জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। তার মধ্যে একটি ফুটেজ ঘিরেই রহস্য দানা বাঁধছে। সেই ফুটেজে দেখা গিয়েছে, লালকেল্লার সামনে যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়, সেই গাড়ি চালাতে দেখা যায় এক জনকে। বিভিন্ন সূত্রে দাবি, ওই চালকই উমর। বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ আগেও তাঁকেই গাড়ি চালাতে দেখা যায়। এই উমরও পেশায় একজন চিকিৎসক। তাঁর সঙ্গে নাকি যোগাযোগ ছিল ধৃত আদিল মাজ়িদ রাথর, মুজ়াম্মিল আহমেদের! জেরায় শাহিন এমনই জানিয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারী সূত্রের। শুধু তাঁদের সঙ্গে নয়, শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উমরের।
শাহিন, উমর, আদিল এবং মুজ়াম্মিল— চার জনই পেশায় চিকিৎসক। তাঁদের যোগসূত্র গড়ে ওঠে ফরিদাবাদের আল-ফালাহ্ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালকে কেন্দ্র করে! সূত্রে দাবি, শাহিন জেরায় জানিয়েছেন, হাসপাতালের কাজ শেষে প্রায়ই উমরের সঙ্গে দেখা হত তাঁর। যখনই দেখা হত উমর নাকি ‘দেশে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটানোর’ কথা বলতেন!
টাইম্স অফ ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গত দু’বছর ধরে নাকি বিস্ফোরণ বা বিস্ফোরণের মালমশলা সংগ্রহের কাজ চলছিল। শাহিনের দাবি, আদিল এবং মুজ়াম্মিলের সঙ্গে মিলে উমর অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরক বোঝাই করছিলেন! সেই বিস্ফোরক দিল্লির বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। ‘দৈনিক ভাস্কর’-এর প্রতিবেদনে বিস্ফোরণস্থলের একটি ভিডিয়োর প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গাড়িতে বিস্ফোরণের পরেই কমলা রঙের আগুন দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, সাধারণত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে এই ধরনের আগুন দেখা যায়। প্রশ্ন উঠছে তবে কি ফরিদাবাদে সোমবার মুজ়াম্মিলের বাড়ি থেকে যে ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়েছে, তার সঙ্গে যোগ রয়েছে দিল্লি বিস্ফোরণের?
আরও পড়ুন:
ফরিদাবাদ মডিউল সোমবার প্রকাশ্যে এলেও তার জাল বোনা হয়েছিল অনেক দিন আগে। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯ অক্টোবর। ওই দিন শ্রীনগরে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটার অভিযোগে চিকিৎসক আদিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে উঠে আসে নানা তথ্য। তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। তদন্তকারীদের এক সূত্রে দাবি, কাশ্মীরে নাশকতার উদ্দেশ্যে যে বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে, তারা সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে তৈরি করত নাশকতার ছক। এ ছাড়া, ব্যক্তিবিশেষকে চিহ্নিত করে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই চক্রের তদন্তে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে কাশ্মীর পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, আদিলকে জেরা করেই উঠে আসে মুজ়াম্মিলের নাম। তদন্তকারীদের এক সূত্রের দাবি, আদিল, মুজ়াম্মিল এবং শাহিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন উমর! সূত্রের খবর, শাহিনকে জেরা করে উঠে এসেছে পারভেজ সইদের নাম। সম্পর্কে দু’জনে ভাইবোন। দাবি করা হচ্ছে, পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আদিল, মুজ়াম্মিলের। একই সঙ্গে মিলেছে জইশ-জালের সন্ধানও। তবে পুরো বিষয়টিই এখনও তদন্তাধীন।