যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শত্রুর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা রণকৌশলের অঙ্গ। কূটনীতির ময়দানেও তা পুরনো রেওয়াজও। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এ বার সেই পন্থাই অবলম্বন করল দিল্লি। স্বীকৃত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াই ছ’দিনের ভারত সফরে স্বাগত জানানো হল তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে। শুক্রবার দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট কাবুলে ক্ষমতা দখলের পরে এই প্রথম কোনও প্রথম সারির তালিবান নেতা ভারতে এলেন। কাবুলের তালিবান শাসকের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর বার্তা অবশ্য গোড়া থেকেই দিয়ে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এর আগে ১৯৯৬ সালে যখন আফগানিস্তানে তালিবান অভ্যুত্থান হয়, ভারত কাবুলে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট তালিবান ফের ক্ষমতা দখল করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে তেমনটা করা হয়নি। ভারতীয় কূটনীতিকদের ফেরত আনা হলেও কয়েক মাসের মধ্যে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠানো হয়েছিল। সেই দলই ভারতীয় দূতাবাসের দৈনন্দিন কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। ২০২৩ সালের গোড়া থেকে তালিবান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শুরু করেছিল ভারত।
চলতি বছরের গোড়ায় ভারতের এক কূটনীতিক আফগানিস্তানের কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইয়াকুব তালিবানের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের পুত্র। ইয়াকুব আফগান তালিবানের অন্দরে ‘পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ‘হক্কানি নেটওয়ার্কে’র বিরোধী বলে পরিচিত। একই পরিচিতি রয়েছে মুত্তাকিরও। তাঁর সঙ্গে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর প্রথম বৈঠক হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ইরানের চাবাহার বন্দর থেকে পণ্য চলাচলের পাশাপাশি সে দেশের বাণিজ্যবৃদ্ধি, বিবিধ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তানের বন্ধ হয়ে থাকা দূতাবাসটি চালু করা হবে।
এরই পাশাপাশি কাবুলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় দূতাবাস চালু করার কথাও শুক্রবার ঘোষণা করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘কাবুলে ভারতের কূটনৈতিক মিশনকে দূতাবাসের মর্যাদা দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারে আমি আনন্দিত।’’ সেই সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী জানান, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভারতে সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আফগানিস্তানের মাটি কোনও অবস্থাতেই ভারত বিরোধী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে শুক্রবার তালিবান বিদেশমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জয়শঙ্কররে। তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তান ভারতকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে মনে করে। ভারত সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনও পদক্ষেপ করব না।’’ ঘটনাচক্রে, মুত্তাকির বিদেশ সফরের সময়ই বৃহস্পতিবার রাতে কাবুলে বিমানহানার অভিযোগ উঠেছে পাক বায়ুসেনার বিরুদ্ধে। বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।