কোনওটি কোটি টাকার, কোনওটি লাখ টাকার গাড়ি। আবার সেই গাড়িগুলির কোনওটির মাথায় লালবাতি, কোনওটিতে আবার নীলবাতি লাগানো। শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি গাড়ির সামনে ‘গভর্নমেন্ট অফ উত্তরপ্রদেশ’ লেখা প্লেট লাগানো। দেখে বোঝারই উপায় নেই যে গোটাটাই সাজানো এবং ভুয়ো। এমনই এক ভুয়ো আইএএস অফিসারকে গ্রেফতার করল লখনউ পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে লখনউয়ের কার্গিল শহিদ পার্কের সামনে ওয়াজিরগঞ্জ থানার পুলিশ নাকা তল্লাশি চালাচ্ছিল। সেই সময় কালো রঙের একটি বিলাসবহুল গাড়ি ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে আরও কয়েকটি দামি গাড়ির কনভয়। প্রতিটিতেই লাল-নীল বাতি লাগানো। কনভয়ের প্রথমে থাকা কালো গাড়িটি দাঁড় করান কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। গাড়িতে ধোপদুরস্ত পোশাকে বসে ছিলেন এক যুবক। গাড়িটি আটকাতেই ঝাঁজিয়ে ওঠেন ওই যুবক। কেন তাঁর গাড়ি আটকানো হল, এই প্রশ্নও তোলেন। শুধু তা-ই নয়, নিজেকে একজন আমলা (আইএএস) হিসাবে পরিচয় দিয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়া শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবক হুমকি দেন, একজন আমলার গাড়ি আটকানোর খেসারত দিতে হবে তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাবেন। কিন্তু ওয়াজিরগঞ্জ থানার কর্তব্যরত আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। তখন তাঁরা যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাতে পুলিশ জানতে পারে, যুবকের নাম সৌরভ ত্রিপাঠী। নয়ডার গৌতমবুদ্ধ নগরে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও নিজেকে আইএএস বলে দাবি করতে থাকেন সৌরভ। কিন্তু তাঁর সেই দাবি যে মিথ্যা, তা ধরে ফেলেন পুলিশ আধিকারিকেরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, অনেক দিন ধরেই এ ভাবে নিজেকে আমলা পরিচয়ে দিয়ে নানা রকম সুযোগসুবিধা ভোগ করছিলেন সৌরভ। তাঁর কাছে বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি রয়েছে। সেগুলিকেই কাজে লাগাতেন তিনি। গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভুয়ো নথিপত্র, সরকারি স্ট্যাম্প, সরকারি পাস, ভিআইপি প্রোটোকলের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে আমলা পরিচয়ে হাজির ছিলেন সৌরভ। বেশ কিছু সরকারি দফতরের বৈঠকেও হাজির ছিলেন। দফতরের আধিকারিকদের ধমকে চমকে নানা রকম সুযোগসুবিধা নিতেন। অনেকের সন্দেহও হয়েছিল। কিন্তু সৌরভের হম্বিতম্বির জন্য কেউ বিশেষ ঘাঁটাতে চাইতেন না।
তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, সমাজমাধ্যমে ‘আইএএস সৌরভ’ নামে অ্যাকাউন্ট চালাতেন সৌরভ। সেই অ্যাকাউন্টে সরকারি অনুষ্ঠান, বৈঠকে নিজের উপস্থিতির ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বিটেক করেছেন সৌরভ। তার পর একটি অসরকারি সংস্থা (এনজিও) খোলেন। আর তার ভিত্তিতে বেশ কিছু সরকারি আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তার পর ধীরে ধীরে নিজেকে আইএএস অফিসার হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেন।