Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Umar Khalid

Supreme Court: ইউএপিএ নিয়েও জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করুক সুপ্রিম কোর্ট, দাবি অভিযুক্তদের পরিবারের

জেল-বন্দি সাংবাদিকের স্ত্রী জানাচ্ছেন, ইদের আনন্দ ফিকে হয়েছে তাঁদের। বাবাকে কাছে না পেয়েই বড় হচ্ছে সন্তানেরা। স্বামীর জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাজিক, মানসিক লড়াইও চলছে। তাই তিনিও তাকিয়ে রয়েছেন ন্যায়-আদালতের দিকে।

উমর ও বনজ্যোৎস্না।

উমর ও বনজ্যোৎস্না। —ফাইল চিত্র।

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৫:৩৭
Share: Save:

বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) নিয়েও জরুরি ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করুক সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এই আবেদনও জানাচ্ছে বর্তমানে জেলে থাকা উমর খালিদ, সিদ্দিক কাপ্পানের পরিবার ও বন্ধুরা।

বুধবার শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের প্রয়োগ স্থগিত করতে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ব্রিটিশ আমলে তৈরি দেশদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত এই আইনের প্রয়োগ স্থগিত থাকবে। এই আইনে চলা সব মামলা স্থগিত হয়ে যাবে। পাশাপাশি, এই আইনে বন্দিরা জামিনের আবেদন করতে পারবেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেএনইউ ক্যাম্পাসে দেশবিরোধী স্লোগান তোলার অভিযোগে কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করেছিল দিল্লি পুলিশ। ওই মামলায় কানহাইয়া, উমর, অনির্বাণকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে যান তিন পড়ুয়া। পরে তিন জনই জামিনে মুক্তি পেলেও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ফের দিল্লি-হিংসায় ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে উমর খালিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা করে দিল্লি পুলিশ।

রেহনাথ কাপ্পান।

রেহনাথ কাপ্পান।

একাধিক বার জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় উমর জেলেই রয়েছেন। বুধবার সকালে উমরের মা সাবিহা খানুম ফোনে বলেন, ‘‘আপনার কাছেই খবরটা প্রথম শুনলাম। বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করার আগে ভাল করে খোঁজ নেব। তবে দেশদ্রোহ ছাড়াও উমরের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাই কবে যে ছেলেটা ঘরে ফিরতে পারবে, অপেক্ষায় আছি।’’

দেশদ্রোহ আইনে সুপ্রিম কোর্টের নয়া পর্যবেক্ষণে খুশি উমরের বন্ধু বনজোৎস্না লাহিড়ী। তিনি দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি এখনও কেন্দ্রের ‘পুর্নবিবেচনা’ শব্দবন্ধটির উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে, দেশদ্রোহ আইন পুরোপুরি বাতিল হয়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলতে পারছি না। তার পরেও বলব, শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দেশদ্রোহ ঔপনিবেশিক আইন। আমাদের স্বাধীন দেশে এখনও এর প্রয়োগ কেন চলছিল, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে শুধুমাত্র দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োগ স্থগিত করে কতটা লাভ হবে, বলা মুশকিল। কারণ, ইউএপিএ ধারার অবাধ প্রয়োগ চলছেই।’’

বনজোৎস্নার ক্ষোভ, ‘‘আজকের রায়ের পর উমর একটি মামলা থেকে অব্যাহতি পাবে। ওর পরিবারের জন্য হয়তো সাময়িক স্বস্তি। কিন্তু ইউএপিএ-তে এখনও তো উমরের শুনানি চলছে। আরও কত দিন ওকে জেলে কাটাতে হবে, জানি না।’’

ওই মামলারই অপর অভিযুক্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্য ফোনে বলেন, ‘‘বরাবরই যাঁরা বিরোধী ভাবধারায় বিশ্বাস করতেন, তাঁদের উপরে এই আইন প্রয়োগ করা হত। ব্রিটিশ আমল থেকে তা চলে আসছে। কিন্তু কোনও দেশকে গণতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করা হলে, এই আইন থাকা উচিত নয়। গণতন্ত্রও কয়েকশো বছর ধরে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে। যে কোনও উন্নত দেশেই এই ধরনের আইন সময়ের সঙ্গে লোপ পেয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীন সরকারের তরফে দেশদ্রোহ আইন প্রয়োগের সুবিধা হল, এই অভিযোগ আনতে বিশেষ তথ্যপ্রমাণ লাগে না। সেখানে দেশবিরোধী যে ধারণাটি গড়ে তোলা হয়, সেটিও তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারেরই তৈরি করা। কোন ভাবনা দেশের হিতে আর কোন ভাবনা দেশের বিরোধী— তা তো নিজের সুবিধামতো ক্ষমতাসীন সরকারই ঠিক করে নিচ্ছে! প্রায় কয়েক দশক ধরে এই আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লিবারাল ডেমোক্রেসিতে আস্থা রাখা সকলেই মনে করেছেন— এই রকম একটি আইনের কোনও সুস্থ, গণতান্ত্রিক সমাজে ঠাঁই নেই। কারণ, এর মাধ্যমে মানুষের চিন্তাধারাকেই অপরাধী করে তোলা হচ্ছে। কী ঠিক, কী ভুল, সরকারের কোন পদক্ষেপ ঠিক নয়— এ সব নিয়ে আরও বেশি করে কথা বলা উচিত। সেটাই একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশের চিহ্ন। আমাদের বিরুদ্ধেও একই রকম ভাবে এর ব্যবহার করা হয়েছে। সে দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত উচিত পদক্ষেপ।’’

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

দেশদ্রোহ প্রসঙ্গে অনির্বাণ বলেন, ‘‘এমন নয় যে, এর আগের সরকার এই আইন প্রয়োগ করেনি। তবে তৎকালীন সরকার খুব বেশি রকমের অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে যে কোনও রকমের সমালোচনার বিরুদ্ধে। ভিন্ন ধারণার লোকজনের উপরে দেশদ্রোহের তকমা লাগিয়ে দেওয়া চলছে। এমন আরও নানা তকমা আবিষ্কার করেছে। সরকার এটাই চায়, যে কোনও এক জনের উপরেও যদি এই তকমা লাগানো যায়, তা হলে বাকি একশো জন, যাঁরা অন্য রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন, তাঁদের ভয় দেখানো যাবে।’’

ইউএপিএ নিয়ে অনির্বাণ একমত বনজোৎস্নার সঙ্গে। তাঁর দাবি— ইউএপিএ, আফস্পা আইন নিয়েও পর্যালোচনা করুক শীর্ষ আদালত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বন্ধু উমর খালিদ ইউএপিএ-তে জেলে বন্দি রয়েছেন। আমরা চাই, সিডিশন নিয়ে যেমন শীর্ষ আদালতে পর্যালোচনা হয়েছে, ইউএপিএ নিয়েও তেমন কথা হোক! এখনও এ নিয়ে ততটা আলোচনা বা আদালতের তৎপরতা চোখে পড়ছে না।’’

২০২০ সালের অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত পরিবারের খবর করতে যাওয়ার পথে মথুরায় গ্রেফতার হন সিদ্দিক কাপ্পান। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। দিল্লিতে মালয়লম সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করা কেরলের বাসিন্দা ওই সাংবাদিক বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

বুধবার কেরলের বাড়ি থেকে ফোনে সিদ্দিকের স্ত্রী রেহনাথ কাপ্পান বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমার স্বামীর বিরুদ্ধে তো একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। ফলে, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন পেলেও বাকি আইনে জেলেই কাটাতে হবে ওঁকে।’’ তাঁর গলায় স্পষ্টতই ক্ষোভ— ‘‘এক জন সাংবাদিক কোনও ঘটনা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। তা হলে আমার স্বামীর দোষটা কী? আর সিদ্দিক কাপ্পান তো হাথরসের মূল ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই পারেননি। তার আগেই ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

গত ৮ মে লখনউ আদালতে মামলার শুনানি থাকলেও তা ফের পিছিয়েছে। আগামী ১৩ মে ওই মামলার শুনানির পরবর্তী দিন। এই প্রসঙ্গে রেহনাথের বক্তব্য— ‘‘সরকার কারও বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনতেই পারে। কিন্তু আদালত তো সাক্ষ্যপ্রমাণ বোঝে। আমার স্বামীর মামলায় কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করারই সুযোগ পাচ্ছেন না আইনজীবীরা। বার বার শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। অথচ, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, ইউএপিএর মতো গুরুতর অভিযোগ, ইডি-সহ একাধিক মামলা আনা হয়েছে।’’

জেল-বন্দি সাংবাদিকের স্ত্রী জানাচ্ছেন, ইদের আনন্দ ফিকে হয়েছে তাঁদের। বাবাকে কাছে না পেয়েই বড় হচ্ছে সন্তানেরা। স্বামীর জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাজিক, মানসিক লড়াইও চলছে। তাই তিনিও তাকিয়ে রয়েছেন ন্যায়-আদালতের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Umar Khalid Supreme Court of India UAPA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE