-ফাইল চিত্র।
ফরাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়ার দাবি নিয়ে ‘আদরণীয় প্রধানমন্ত্রীজি’-র কাছে দরবার করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আর নীতীশের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নীতীশের এই দাবির মুখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ বার একটি পাল্টা ‘ডোসিয়ার’ তৈরি করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিহারের বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ নিতে গত দু’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নীতীশ কুমারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছিলেন। তখনই ঠিক হয়, দিল্লি গিয়ে সবিস্তারে রাজ্যের হাল জানাবেন নীতীশ। বিহারে গঙ্গা অববাহিকায় বন্যার জন্য গত রবিবার ফরাক্কা বাঁধকেই দায়ী করেন নীতীশ। তাঁর দাবি, বক্সার থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত গঙ্গার নাব্যতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। সে কারণে জল জমে তা দু’পাড় ছাপিয়ে যাচ্ছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকা বাড়ছে। যার শিকার হচ্ছে রাজধানী পটনাও। এক বার কোনও এলাকায় জল ঢুকে গেলে সহজে তা বের হচ্ছে না। সে কারণেই ফরাক্কা বাঁধের পুনর্মূল্যায়ণ জরুরি। এমনকী, ফরাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর দাবিও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাতে সায়ও দিয়েছেন। শীঘ্রই একটি পলি পরিচালন নীতি ঘোষণার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ফরাক্কা বাঁধের বিষয়টির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীতীশ কুমারের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালই। তার পরেও কেন পশ্চিমবঙ্গের একটি বাঁধ নিয়ে নীতীশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। এই বাঁধ ভেঙে গেলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পশ্চিমবঙ্গই। বর্ষাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। এ ছাড়া গরমের সময়ে কলকাতা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসঙ্কট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শেষ হয়ে যাবে কলকাতা বন্দর। এমনকী, কলকাতা থেকে গঙ্গা-পথে ইলাহাবাদ পর্যন্ত ১ নম্বর জাতীয় জলপথের ঘোষণা করেছে মোদী সরকারই। তাও অবরুদ্ধ হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিহারের দাবি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না। আর প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনার বিষয়ে আমার বলার কোনও এক্তিয়ার নেই।’’ তবে সেচ দফতর সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে শ্বেতপত্র ধাঁচের একটি ‘ডোসিয়র’ তৈরির কাজও রাজ্য সরকার শুরু করছে। ফরাক্কা নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য সেখানেই তুলে ধরা হবে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দাবির বিষয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আমি এক সময় ফরাক্কা বাঁধের সমালোচনা করেছি। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে বাঁধটি রয়েছে। এর ফলে ফরাক্কা থেকে মোহনা পর্যন্ত পরিবেশ পরিবর্তিত হয়েছে। এক ধরনের ইকোলজি তৈরি হয়েছে। কোনও ভাবে বাঁধ ভেঙে দেওয়া হলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে পরিবেশের উপর।’’ তাঁর মতে, এ ছাড়া বর্ষার সময়ে ফরাক্কার প্রায় সমস্ত গেট খোলা থাকে। তাতে অসুবিধা হওয়ার কোনও কথা নয়। ফরাক্কা বাঁধ ভেঙে দিলে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ ভেঙে পড়বে। ইলিশ মাছ, গাঙ্গেয় ডলফিনরা বিপদে পড়বে। গঙ্গা তীরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের ৪৪টি পুরসভা ও তিনটি পুর নিগমে জল সঙ্কট তৈরি হবে। নিম্ন অববাহিকায় নোনা জলের প্রকোপ বাড়বে।
এরই মধ্যে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির এ দিন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নীতীশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই দরবার করুন না কেন, গঙ্গার বন্যার বিষয়ে শাসক জোটের প্রধান শরিক আরজেডির প্রধান লালুপ্রসাদ নীতীশের ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ নীতির সমর্থন করেন কি না, সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে স্বভাবসুলভ ঢঙে বলেছেন, ‘‘গঙ্গা মাঈ বাড়িতে এসেছেন! এ তো সৌভাগ্যের কথা।’’
আরও পড়ুন- আকাশবাণী মৈত্রীর যাত্রা শুরু কলকাতায়, আরও কাছাকাছি ঢাকা-নয়াদিল্লি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy