পাকিস্তানের মতো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় মদতের অভিযোগ তুলে গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গলা তুলেছে ভারত। এ বার সেই দাবিকেই এক রকম স্বীকৃতি দিল আর্থিক নয়ছয়, তথা সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বিষয়ক আন্তর্জাতিক নজরদার সংস্থা এফএটিএফ।
চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তারা প্রথম বার সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় মদত নিয়ে মুখ খুলেছে। সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক সহায়তা করার মানে হল, ওই বিষয়টি মদতদাতা দেশের রাষ্ট্রনীতির অংশবিশেষ। এফএটিএফ-এ মতে, এই ধরনের মদত আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার পক্ষেও ক্ষতিকর। এর আগে ২০২২ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগে দায়ী করেছিল ভারত। এফএটিএফ-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টেও পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্মের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাতে উঠে এসেছে, অপরাধমূলক কাজে কী ভাবে ই-কমার্স সংস্থা, অনলাইন অর্থ বিনিময় ব্যবস্থার সুবিধা নিচ্ছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি।
২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ৪০ জন আধাসেনা নিহত হন। ওই হামলায় জইশ-ই-মহম্মদকে দায়ী করেছিল ভারত। তদন্তে জানা যায়, বিস্ফোরণ জোরদার করতে ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজ়নের মাধ্যমে বিপুল অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়ো আনিয়েছিল জঙ্গিরা। যা মেশানো হয়েছিল বিস্ফোরকে। ২০২২ সালে গোরক্ষনাথ মন্দিরে হামলার ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের আক্রমণ করে আইএস অনুপ্রাণিত এক জঙ্গি। তদন্তে দেখা যায়, পে প্যাল-এর মতো অনলাইন ব্যবস্থায় সে বিভিন্ন দেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে সমাজমাধ্যম, ভিপিএন পরিষেবারও ব্যবহার করছে সন্ত্রাসবাদীরা। এ বছর এপ্রিলে পহেলগামে জঙ্গি হামলার নিন্দা করে এফএটিএফ জানিয়েছে, বৃহত্তর আর্থিক মদত এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া এত বড় মাপের সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো সম্ভব নয়।
নয়াদিল্লি এই প্রসঙ্গে বলেছে, আন্তর্জাতিক কোনও রিপোর্টে এই প্রথম সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় মদতের বিষয়টি মেনে নেওয়া হল। ব্রিকস শীর্ষ বৈঠকের পরে গত কাল ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুইজ় ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী মোদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের কড়া অবস্থানের কথা বলেন। পাকিস্তান ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র চিনের নাম না করলেও তিনি বলেন, এক দিকে সন্ত্রাসে মদত এবং অন্য দিকে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা— এই দুমুখো নীতি কোনও ভাবেই ভারত মেনে নেবে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)