জয়পাল সিংহ ভুল্লার এবং যশপ্রীত সিংহ।
ছিল হ্যামার থ্রোয়ার। সেখান থেকে কুখ্যাত গ্যাংস্টার হয়ে উঠেছিল নিউটাউনে শাপুরজির আবাসনে নিহত দুষ্কৃতী জয়পাল সিংহ ভুল্লার। এই ঘটনায় নিহত হয়েছে যশপ্রীত সিংহ নামে আরও এক দুষ্কৃতী।
পঞ্জাবের লুধিয়ানায় সরকারি স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টার স্পিড ফান্ড অ্যাকাডেমির প্রতিভাবান ছাত্র ছিল জয়পাল। ওই অ্যাকাডেমিতেই জয়পালের পরিচয় হয় আরও এক খেলোয়াড় হ্যাপির সঙ্গে। হ্যাপি অল্প সময়ের জন্য অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখান থেকেই তাদের ঘনিষ্ঠতা শুরু। এবং এখান থেকেই প্রতিভাবান হ্যামার থ্রোয়ারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার হওয়ার সফর শুরু।
২০০৪-এর জুলাইয়ে জয়পাল এবং হ্যাপি দু’জনে মিলে লুধিয়ানার এক সিনেমা হলের মালিকের সাত বছরের ছেলে চিরাগকে অপহরণ করে। এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই অপরাধ জগতে হাত পাকানো শুরু জয়পালের। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয় জয়পাল। জেলে থাকাকালীন তার অপরাধ জগতের পরিসরটা আরও বাড়িয়ে ফেলে। সেখানে কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
এখানে জয়পালের পরিচয় হয় রাজীব ওরফে রাজার সঙ্গে। ২০০৬-এ একটি গহনার দোকানে ডাকাতি করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল রাজা। জয়পাল এবং রাজা দু’জনে আরও এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার শেরা খুব্বানের সঙ্গে মিলে একটি দল তৈরি করে।
এর পর তারা একসঙ্গে হোসিয়ারপুরে একটি বন্দুক কারখানা লুঠ করে। পঞ্চকুল্লা এবং মোহালির কয়েকটি ব্যাঙ্কে ডাকাতি করে। এমনকি হাইওয়ে দিয়ে যাতায়াত করা গাড়িগুলোতেও লুঠপাট চালাতে শুরু করে এই দলটি।
২০০৯-এর জুলাইয়ে জয়পাল এবং তার কয়েক জন সঙ্গী চণ্ডীগড় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। বিভিন্ন মামলার জন্য তাদের পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লির ২৭টি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মামলাতেই প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল জয়পাল এবং সঙ্গীরা।
চণ্ডীগড়ের বুরারি জেলে থাকার সময় জয়পাল রকি নামে এক দুষ্কৃতীর আলাপ জমায়। তারা নতুন দল গঠন করে। কিন্তু তাদের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে দল ভেঙে যায়। এর পর গুরপ্রীত সেখোর সঙ্গে দল গঠন করে মাদক পাচার শুরু করে জয়পাল।
জয়পাল ওরফে মনজিৎ সিংহের নামে ১০ লক্ষ টাকা এবং অন্য দুষ্কৃতী যশপ্রীতের নামে ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পঞ্জাব পুলিশ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থানে খুন, তোলাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি এবং পাচার-সহ ৪৫টিরও বেশি মামলা ঝুলছে জয়পালের নামে।
জয়পালের বাবা পঞ্জাব পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর। গত ৫ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল জয়পাল। তার গতিবিধি পুলিশও টের পাচ্ছিল না। কারণ সে মোবাইল ফোন ব্যবহার প্রায় করতই না।
সম্প্রতি জয়পালের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে মধ্যপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করে পঞ্জাব পুলিশ। ওই দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে দুই এএসআই-কে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তাদের জেরা করে জয়পালের গতিবিধি জানার চেষ্টা করে। এর পরই নিউটাউনের শাপুরজি আবাসনে জয়পালের খোঁজ পায় পুলিশ।
একটি মাদক মামলার তদন্তে জয়পালের নাম উঠে আসতেই তার খোঁজ করতে বুধবার সাপুরজি আবাসনে গিয়েছিল পুলিশ। পঞ্জাব পুলিশের থেকে কলকাতা পুলিশ জানতে পারে, জয়পাল অস্ত্র এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত। পুলিশকে দেখেই গুলি ছুড়তে শুরু করে জয়পাল এবং যশপ্রীত। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও। সেই সংঘর্ষেই দুই দুষ্কৃতী নিহত হয়। এই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy