Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাক পতাকা কাণ্ডে গৃহবন্দি গিলানি, আলম

দেশ জুড়ে চাপের মুখে হুরিয়ত নেতা সৈয়দ গিলানির পথসভায় পাকিস্তানি পতাকা ওড়া নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে কড়া বার্তা দিল কেন্দ্র। তার পরেই সৈয়দ গিলানি ও আর এক হুরিয়ত নেতা মাসারত আলমকে গৃহবন্দি করেছে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমেছে পাকিস্তানও।

সৈয়দ গিলানি ও মাসারত আলম

সৈয়দ গিলানি ও মাসারত আলম

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

দেশ জুড়ে চাপের মুখে হুরিয়ত নেতা সৈয়দ গিলানির পথসভায় পাকিস্তানি পতাকা ওড়া নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে কড়া বার্তা দিল কেন্দ্র। তার পরেই সৈয়দ গিলানি ও আর এক হুরিয়ত নেতা মাসারত আলমকে গৃহবন্দি করেছে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমেছে পাকিস্তানও।

গত কাল শ্রীনগরে গিলানির পথসভায় পাকিস্তানের পতাকা হাতে দেখা গিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মাসারত আলমকে। পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগানও দেন তিনি। বুধবার রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মুফতি মহম্মদের সঙ্গে। তখনই রাজনাথ স্পষ্ট করে দেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও রকম গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আজ রাজনাথ বলেন, ‘‘কাশ্মীর-সহ দেশের যে কোনও প্রান্তে এই ধাঁচের ভারত বিরোধী কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না কেন্দ্র। এখনই কাশ্মীরের ওই সব বিচ্ছিন্নবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’ প্রয়োজনে গিলানি বা মাসারতের মতো বিচ্ছিন্নতবাদী নেতাদের গ্রেফতার বা অন্তত গৃহবন্দি করে রাখার পরামর্শও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরেই রাতে গিলানি ও মাসারতকে গৃহবন্দি করা হয়। মুফতি মহম্মদ জানিয়েছেন, কাল রাতেই গিলানি, মাসারত-সহ একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।

মুফতি মহম্মদের সরকারকে কড়া বার্তা দিলেও নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি কিন্তু কমছে না। বিরোধী কংগ্রেস তো বটেই, মাসারতকে জেল থেকে ছাড়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সঙ্ঘ পরিবারও। আজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জম্মু-কাশ্মীর সরকারের পাশাপাশি মোদী সরকারকেও তুলোধনা করেছে। কাশ্মীরে পিপি়ডি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির সরকার গড়ার প্রশ্নে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল সঙ্ঘের। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত জোট সরকার গঠনে সম্মতি দেয় তারা। কিন্তু সেই জোট সরকারের কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ সঙ্ঘ। তাদের বক্তব্য, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি পিডিপি নেতৃত্বের নরম মনোভাবের ফলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নরম মনোভাব নিয়ে চলার কৌশল নিয়েছেন মুফতি মহম্মদ। সঙ্ঘ পরিবারের অভিযোগ, ক্ষমতায় এসে প্রথমেই কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ দেন তিনি। তা নিয়ে বিতর্ক মিটতে না মিটতেই ৭ মার্চ মাসারতকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকেই কাল পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিবেশী দেশের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। মোদী সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়াতে তৎপর হয়েছে কংগ্রেসও। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

আজ বিষয়টি নিয়ে ভারতকে তোপ দেগেছে পাকিস্তান। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র তসনিম আসলম বলেন, ‘‘শ্রীনগরের পথে পাক পতাকা কাশ্মীরের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের প্রতীক। ভারত কাশ্মীরিদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান রুখতে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করছে। আমাদের বিশ্বাস, কাশ্মীরি নেতাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছে।’’ ‘‘বিতর্কিত এলাকা’’ কাশ্মীরের জন্য ফের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে সমাধানের পুরনো বুলিও আওড়েছে ইসলামাবাদ।

অবশ্য পাক পতাকা কাণ্ডের দায় কিছুটা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন মাসারত। তাঁর দাবি, ‘‘আমি পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিইনি। হুরিয়তের কোনও কর্মী-সমর্থকও পাক-পতাকা ওড়াননি। কিছু অতি-উৎসাহী ছেলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ তবে মাসারত এটাও স্পষ্ট করে দেন, পাক-পতাকা ওড়ানোর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা কাশ্মীরে আগেও ঘটেছে।’’

মাসারত এই ঘটনায় অন্যায় কিছু না দেখলেও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না জম্মুর বাসিন্দারা। গিলানির পথসভার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জম্মুর বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেন তাঁরা। বিচ্ছিন্নতবাদী নেতাদের বিশেষত মাসারতকে গ্রেফতারের দাবিও জানান মিছিলে অংশ্রগ্রহণকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE