Advertisement
E-Paper

ইস্তফায় অনড় রাহুল, নিশানায় পরিবারতন্ত্র

এর মধ্যেই সনিয়া গাঁধী আজ বিবৃতি দিয়ে রায়বরেলীর ভোটারদের পাশাপাশি বিরোধীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, লড়াই এখনও শেষ হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:৩৪
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

ইস্তফা দেওয়ার পরে চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও নিজের অবস্থানে অনড় রাহুল গাঁধী।

লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরেই কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন রাহুল গাঁধী। সনিয়া গাঁধী তাঁকে দলের ওয়ার্কিং কমিটির সামনে বিষয়টি রাখতে বলেন। গত কাল দিল্লিতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের নেতারা রাহুলের ইস্তফা ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা করেন। একটি প্রস্তাব পাশ করিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলের ইস্তফা খারিজও করে দেয় ওই কমিটি। তা সত্ত্বেও রাহুল নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন এবং এও বলেছেন, নতুন সভাপতি হিসেবে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার নামও যেন ভাবা না হয়। কংগ্রেসের এক শীর্ষ সূত্রের মতে, এর পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও রাহুল এখনও নমনীয় হননি। উল্টে তিনি নেতৃত্বের একাংশের উপরেই ক্ষুব্ধ।

এর মধ্যেই সনিয়া গাঁধী আজ বিবৃতি দিয়ে রায়বরেলীর ভোটারদের পাশাপাশি বিরোধীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, লড়াই এখনও শেষ হয়নি। কংগ্রেসের একাংশের মতে, রাহুল নিতান্তই গররাজি হলে দলের হাল ধরতে শেষ মুহূর্তে সনিয়ার দ্বারস্থ হতে পারেন নেতারা।

গত কাল বৈঠকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যখন হারের দায় রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়ে ঠেলার চেষ্টা করছিলেন, তখন ক্ষুব্ধ রাহুল বলেন, ‘‘জ্যোতি, তুমি নিজেও তো একজন রাজ্যের নেতা। এখানে তো অনেক রাজ্যের নেতাই নিজেদের ছেলেকে টিকিট দেওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসেছিলেন। অনেকে তো এমনও বলেছিলেন, ছেলেকে টিকিট না দিলে দল ছেড়ে দেবেন! আর এখন নিজেদের ছেলেদের জেতানোর জন্য গোটা কংগ্রেস দলটিকেই হারিয়ে বসে আছেন রাজ্যে।’’ রাহুলের লক্ষ্য ছিলেন অশোক গহলৌত, কমল নাথ বা পি চিদম্বরমের মতো নেতা, যাঁরা নিজেদের ছেলেদের এ বার প্রার্থী করেছিলেন। এর মধ্যে পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি ও কমল নাথের ছেলে নকুল নাথ জিতেছেন। মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনের মধ্যে একটি আসনেই জিতেছে কংগ্রেস। সেটি নকুল নাথের। রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলেও বাকি ২৮টি আসনে হেরেছে তারা।

রাহুলের মনোভাবের আঁচ পেয়েই কংগ্রেসে ইস্তফা পেশ করার হিড়িক শুরু হয়ে যায়। কমল নাথ গতকাল রাতেই রাজ্য কমিটির সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আর্জি পেশ করেন। আজ অশোক চহ্বাণ মহারাষ্ট্রের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা জানান। মহারাষ্ট্রের খারাপ ফল নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি শিবিরে রসিকতা শুরু হয়েছে যে, ‘মুম্বইয়ের কংগ্রেসের সব প্রার্থী হেরে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। কারণ মুম্বইয়ে দলের সভাপতি মিলিন্দ দেওরা হেরে গিয়েছেন। মিলিন্দ প্রশ্ন তুলছেন না, কারণ রাজ্য সভাপতি অশোক চহ্বাণও হেরে গিয়েছেন। চহ্বাণ প্রশ্ন তুলছেন না, কারণ মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গেও হেরে গিয়েছেন। খড়্গে প্রশ্ন তুলছেন না, কারণ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গাঁধী অমেঠিতে হেরে িয়েছেন।’

কাল অনেক নেতাই বৈঠকে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। আজ এমন এক নেতা বলেন, ‘‘রাহুল কংগ্রেসের নেতাদের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হচ্ছেন। কোথায়? দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে। অথচ ওই ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুলের পরিবারের তিন জন বসে।’’ ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের একাংশ বলছে, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা যাঁদের নিজেদের সচিব বানিয়েছেন, সেই ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তিদের মঞ্চে বসিয়ে রাখেন। কাল ওয়ার্কিং কমিটির ভিতরেও বসিয়ে রেখেছিলেন। মাটিতে কাজ করা ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে সেই অরাজনৈতিক সচিবেরাই রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। এক নেতার কথায়, ‘‘রাহুল নিজের ইস্তফার কথা বলে আসলে বাকি নেতাদের ইস্তফার জন্য চাপ দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে, সেটাই তাঁর কৌশল। কিন্তু ওঁকে যদি সংগঠনে আমূল পরিবর্তন করতে হয়, তা হলে সবার আগে তাঁর ও তাঁর বোনের আশপাশের লোককে সরাতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের ঠাঁই দিতে হবে, যাঁদের সঙ্গে তৃণমূল স্তরের যোগ রয়েছে। জেলা ও ব্লক স্তরে সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। ভবিষ্যতে যাঁরা রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সচিব হবেন, ভুল করেও তাঁরা যেন কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না নেন।’’

Rahul Gandhi Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy