ছবি: চিন্তা বার-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সৌজন্য়ে।
সপ্তাহখানেক আগেই সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে মাদ্রাজ আইআইটি ক্যাম্পাসে সরব হয়েছিলেন। তবে সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ পেলেন জার্মান ছাত্র জেকব লিন্ডেলথাল। শুধু তাই নয়, জেকবকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ারও মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে চেন্নাইয়ের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও)। অভিযোগ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর জেরেই সরকারের কোপের মুখে পড়েছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে এফআরআরও-র দাবি, ভিসা আইন লঙ্ঘন করার জন্যই তাঁকে দেশ ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। জেকবের সমর্থনে মুখ খুলেছেন মাদ্রাজ আইআইটির সহপাঠীরা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর।
এক বছরের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অঙ্গ হিসাবে ভারতে এসেছিলেন জেকব। মাদ্রাজ আইআইটি-র পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তরে ওই ছাত্রটি গত ১৬ ডিসেম্বর মাদ্রাজ আইআইটি ক্যাম্পাসের তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধেও চেন্নাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ করেন তাঁরা। ওই বিক্ষোভে শামিল ২৪ বছরের জেকবের হাতে দেখা যায় নাৎসি জার্মানির সঙ্গে তুলনা টানা প্ল্যাকার্ড “১৯৩৩-১৯৪৫ উই হ্যাভ বিন দেয়ার”।
আরও পড়ুন: এনপিআরে বরাদ্দ অনুমোদন, লাগবে না কোনও নথি, জানাল কেন্দ্র
গত সপ্তাহের ওই বিক্ষোভের পর সোমবার তাঁকে ডেকে পাঠান অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরা। জেকবের অভিযোগ, দফতরের তিন জন আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাতে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছুই বেশ খোলামেলা আলাপচারিতার মতো চলছিল। আমরা প্রতিবাদের সংস্কৃতি নিয়েও বেশ আলোচনা করছিলাম। এর পর ওঁরা জানতে চাইলেন, সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভে কেন শামিল হয়েছি? আলাপচারিতার শেষে ওঁরা বললেন, আমি ছাত্র ভিসা আইন ভেঙেছি। হয়তো অবিলম্বে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ নিয়ে লিখিত চিঠি চাইলে আমার পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ওঁরা।’’ জেকবের অভিযোগ, এ বিষয়ে একটি লিখিত চিঠির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা পাননি তিনি। এর পর মাদ্রাজ আইআইটিতে ফিরে সঙ্গে সঙ্গেই ভারত ছাড়েন জেকব।
মাদ্রাজ আইআইটি-তে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভে শামিল ছিলেন জেকব। ছবি: চিন্তা বার-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সৌজন্যে।
ভারত ছাড়ার আগে চেন্নাই বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে জেকবের আরও দাবি, ‘‘এক সময় ওই অফিসারেরা জানান, কোনও কিছু না জেনেই এ ধরনের বিক্ষোভে আমার থাকা উচিত হয়নি। তা শুনে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, এটা আসলে মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন।’’
আরও পড়ুন: গুলি করে মারা হয়েছে, এই প্রথম স্বীকার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ
গোটা ঘটনার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন মাদ্রাজ আইআইটি কর্তৃপক্ষ। জেকবের বিষয়টি তাঁরা অবগত নন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্টানের ডিরেক্টর ভাস্কর রামামূর্তি। এমনকি, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান কে সেতুপতিও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেন মন্তব্য করেন।
This is dismaying. We used to be a proud democracy, an example to the world: https://t.co/M1MU3CyJVT No democracy punishes freedom of expression. I call on @DrRPNishank to instruct @iitmadras to withdraw the expulsion & allow India to hold its head high in the academic world.
— Shashi Tharoor (@ShashiTharoor) December 24, 2019
তবে জেকবের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জানিয়েছেন মাদ্রাজ আইআইটির একটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘চিন্তা বার’। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, ‘মানবতার জন্য জেকবের চিন্তন ও এ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই শামিল হওয়ার জন্য জেকবকে সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ জেকবের সমর্থনে মুখে খুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও। এ দিন টুইটারে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখলিওয়াল নিশঙ্ককে ট্যাগ করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা খুবই আতঙ্কের। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে গর্ব করি। বিশ্বের কাছে উদাহরণ। কোনও গণতন্ত্রই বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। আমি আরপি নিশঙ্ককে অনুরোধ করব, বিশ্বশিক্ষার জগতে ভারতের যাতে মাথা উঁচু করে থাকতে পারে, তার জন্য অবিলম্বে জেকবের বহিষ্কার প্রত্যাহার করা হোক।’
এই আবহে ভারতের একাংশের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেকব। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভারতকে ভালবাসি। তবে এ দেশের সঙ্কীর্ণ কট্টরপন্থাকে ঘিরে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। জার্মানিতে কোনও আইনি প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য কাউকে কোনও দিন বহিষ্কার করা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy