পথকুকুর নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের আবহেই এ বার জলাতঙ্কে মৃত্যু হল চার বছরের এক শিশুর। রবিবার রাতে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম খাদিরা বানু। দেবাঙ্গিরির বাসিন্দা খাদিরাকে গত এপ্রিলে পথকুকুর কামড়েছিল। বাড়ির বাইরে খেলার সময় হামলা করে একটি কুকুর। সেই ঘটনার পর শিশুটিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠেছিল বলে দাবি পরিবারের। কিন্তু সম্প্রতি শিশুটি বমি করা শুরু করে। তখন শারীরিক পরীক্ষা করে জানা যায়, জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়েছে খাদিরা।
সোমবার শিশুটির কাকা সাজিদ দাবি করেন, খাদিরার চিকিৎসার জন্য তাঁরা ৯-১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছিলাম। বেঙ্গালুরুর রাজীব গান্ধী হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল খাদিরার।’’ সাজিদের অভিযোগ, দেবাঙ্গিরিতে পথকুকুরের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু কেউই কোনও পদক্ষেপ করেননি এই সমস্যা দূর করতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাই না খাদিরার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এমন কারও সঙ্গে হোক। পথকুকুরটি খাদিরার মুখে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল। খাদিরার চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা শরীরে।’’ চিকিৎসার পরেও কী ভাবে সংক্রমণ ছড়াল তা নিয়েও সন্দিহান খাদিরার পরিবার।
গত কয়কে মাসে পর পর পথকুকুরের কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে বেঙ্গালুরুতে। গত অগস্টে দুই পড়ুয়ার উপর হামলা চালায় পথকুকুর। জুলাইয়েও এক বৃদ্ধকে এক দল কুকুর আক্রমণ করে। গত বছরে পথকুকুরের হামলায় এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২ লক্ষ ৮১ হাজার পথকুকুরের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে রাজ্য জুড়ে। তার মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পথকুকুরের হামলার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে বিজয়পুরায় (১৫,৫২৭), তার পর বেঙ্গালুরু (১৩,৮৩১), হাসন (১৩,৩৮৮), দক্ষিণ কন্নড় (১২,৫২৪) এবং বাগালকোট (১২,৩৯২)।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় দিল্লি থেকে পথকুকুরদের সরিয়ে কোনও আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজধানীর সমস্ত লোকালয় পথকুকুর-মুক্ত করতে হবে। এই কাজের সঙ্গে কোনও আপোস করা যাবে না। কোনও সংগঠন সেই কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানায় শীর্ষ আদালত। এই নির্দেশ ঘিরে সারা দেশে শোরগোল পড়ে যায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টজনেরা প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেন। প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠনও। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা এবং বিচারপতি এন অঞ্জরিয়ার বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। কেন্দ্র এবং অন্য পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।