দীপাবলির আগে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, বর্তমানে জিএসটি-র যে পাঁচটি স্তর (০, ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশ) রয়েছে, তা প্রধানত দু’টিতে কমিয়ে আনা হতে পারে। থাকতে পারে কেবল পাঁচ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ জিএসটি। তবে সিগারেট, পানমশলার মতো ক্ষতিকর পণ্যে (সিন অ্যান্ড ডিমেরিট গুড্স) ৪০ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য হতে পারে বলে সরকারি সূত্র উল্লেখ করে দাবি করছে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম। জিএসটি-র এই বিশেষ এবং সর্বোচ্চ স্তরটিতে রাখা হতে পারে অনলাইন গেমিংকেও।
সূত্রের দাবি, ‘ক্ষতিকর’ বিভাগে কোন কোন পণ্য থাকবে, তা দেশের সামাজিক নীতির কথা মাথায় রেখে স্থির করেছে রাজ্য দফতর। অনলাইন গেমিং ছাড়াও এই বিভাগে রাখা হতে পারে পানমশলা, সিগারেট, বিলাসবহুল গাড়ি, এসইউভি-কে। যদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তবে অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলি সরব হতে পারে। বর্তমানে অনলাইন গেম থেকে সরকার ২৮ শতাংশ শুল্ক নেয়, যা সর্বোচ্চ। তাতেই আপত্তি জানিয়েছে একাধিক সংস্থা। ৪০ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য হলে তাদের চিন্তা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে, অনলাইন গেমিংয়ের মাধ্যমে যাঁরা অর্থ রোজগার করেন, তাঁদের ৪০ শতাংশ কর দিতে হতে পারে। জিএসটি কাউন্সিলের অনুমোদন পেলে এই কর চালু হবে।
আরও পড়ুন:
অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরকার চিন্তিত। বহু মানুষ এই সমস্ত গেমে টাকা দিচ্ছেন। কোনও কোনও সময় ব্যবহারকারীর অজান্তেও টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে এতে ৪০ শতাংশ জিএসটি প্রযুক্ত হলে রাজস্ব বাবদ সরকারের আয় এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে অনলাইন গেমিংকে ২৮ শতাংশ জিএসটি-র আওতায় আনা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলিকে আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কেওয়াইসি-সহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনে নজর রাখবে সরকার। প্রয়োজনে পদক্ষেপও করবে।
সূত্রের খবর, জিএসটি কাঠামো সংস্কারের উদ্দেশ্যে গত ছ’মাস ধরে কাজ করে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে নতুন জিএসটি কাঠামো চালু হয়ে যেতে পারে। তাতে অবশ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস সস্তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি গত শুক্রবার লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছেন, ‘‘এ বারের দীপাবলি আমি আপনাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের করে দিচ্ছি। এই দীপাবলিতে দেশবাসী একটি বড় উপহার পাবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার আনছি। এর ফলে সারা দেশে করের বোঝা কমবে। দীপাবলির আগে এটাই হবে উপহার।” নতুন জিএসটি কাঠামোর খসড়া ইতিমধ্যে রাজ্যগুলির কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারগুলিকে সহযোগিতা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিসের দাম বাড়তে বা কমতে পারে?
- ঘি, মাখন, প্যাকেটজাত খাবার, ফলের রস ইত্যাদির উপর এখন ১২ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য। সূত্রের খবর, নতুন কাঠামোয় এগুলিকে পাঁচ শতাংশের স্তরে নামিয়ে আনা হতে পারে। একই ভাবে হাজার টাকার নীচে পোশাক এবং জুতোর উপরেও জিএসটি কমে হতে পারে পাঁচ শতাংশ।
- ছোট গাড়ি এবং দু’চাকার গাড়ি (২৫০ সিসি)-র উপর থেকে জিএসটি কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হতে পারে। বর্তমানে এগুলিতে ২৮ শতাংশ কর প্রযুক্ত।
- বাতানুকূল যন্ত্র, টিভি (৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত), বাসন ধোয়ার যন্ত্র (ডিশওয়াশার) প্রভৃতি পণ্যের দামও কমতে পারে। সিমেন্টের দাম কমে আসতে পারে। সিমেন্টে এখন কর নেওয়া হয় ২৮ শতাংশ। তা ১৮ শতাংশের স্তরে আনা হতে পারে। এতে নির্মাণের খরচ কমবে।
- স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমার প্রিমিয়ামে কর কমাতে পারে সরকার। ১৮ শতাংশ থেকে জিএসটি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে করের পরিমাণ শূন্যও করা হতে পারে।
আধিকারিকদের উল্লেখ করে ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, এখন যে সমস্ত পণ্যে ১২ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হয়, তার ৯৯ শতাংশই পাঁচ শতাংশের স্তরে নেমে আসবে। যে পণ্যে এখন ২৮ শতাংশ জিএসটি রয়েছে, তার ৯০ শতাংশ নামবে ১৮ শতাংশে। এতে জিনিসের দাম যেমন কমবে, তেমনই কর ব্যবস্থা আরও সহজবোধ্য হবে সাধারণ মানুষের কাছে।