সর্বদল বৈঠকে ঢোকার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার সংসদ ভবনে। ছবি: পিটিআই।
অন্য বার তা-ও প্রশ্ন থাকে, কোন কোন বিল পাশ হবে? হট্টগোলে ক’দিন পণ্ড হবে কাজ? সে সব এ বার হয়ে দাঁড়িয়েছে গৌণ। মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীদের ইস্তফার প্রশ্নে পিছু হটছে না বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর কংগ্রেস ঘোষণা করে দিয়েছে, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীদের ইস্তফা ছাড়া সংসদ চালাতেই দেবে না তারা। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ বা দেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হোক চাই না-হোক, সংসদের বাদল অধিবেশনে এ বার একটি বিষয় নিশ্চিত, ঝড়! রাজনৈতিক চাপানউতোর আর হট্টগোলের।
অধিবেশন শুরু হচ্ছে কাল। তার আগেই কংগ্রেস স্পষ্ট করে দিয়েছে, ললিত মোদী ও ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে এমন হট্টগোল করা হবে, যাতে সংসদ চলতেই না পারে। বাম, এনসিপি, জেডি(ইউ)-এর মতো দলগুলিকেও সঙ্গে পাওয়ার আশায় রয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সরকারও আজ বুঝিয়ে দিয়েছে, চাপের মুখে মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই নেই। ইস্তফাও কেউ দেবেন না। বরং বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরিয়ে কংগ্রেসকে একঘরে করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। যাতে সংসদে পণ্য-পরিষেবা কর ও সংস্কারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো যায়।
কংগ্রেস অবশ্য বলছে, সে গুড়ে বালি। কোনও বিলই যাতে ভোটাভুটি পর্যন্ত না গড়ায়, তেমন হট্টগোলই বাধানো হবে। বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে চাইলেও লাভ কিছু হবে না। কারণ, সংসদই চলবে না। অধিবেশন পণ্ড করার যুক্তি হিসেবে কংগ্রেস ঢাল করছে বিজেপির অতীত ভূমিকাকেই। কপিল সিব্বল আজ মনে করিয়ে দেন, বিরোধী পক্ষে থাকার সময় অরুণ জেটলিই বলেছিলেন, প্রতিরোধও সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি কৌশল। সে সময় সংসদ স্তব্ধ করে রাখার নজির তৈরি করেছে বিজেপিই। আলোচনার প্রস্তাব বার বার উড়িয়ে বিক্ষোভের রাস্তায় হেঁটেছে। কংগ্রেস এখন তাদের দৃষ্টান্তই অনুসরণ করবে।
তাতে অধিবেশন পণ্ড হওয়ার ষোলো আনা আশঙ্কা থাকলেও বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিংহ চৌহানদের দিল্লিতে ডেকে অমিত শাহরা কাল স্থির করেছেন, কারও ইস্তফার প্রশ্ন নেই। কারণ, কোনও মন্ত্রী কোনও ভুল করেননি। যাবতীয় তথ্যই তার প্রমাণ। দলের অবস্থানের সঙ্গে এনডিএ শিবিরের সকলকে এক সুরে বাঁধতে কাল থেকেই সক্রিয় নরেন্দ্র মোদী ও অমিত। কাল রাতেই দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারে আসার পরে আজই প্রথম এনডিএ-র বৈঠক হলো। সেখানেও অনড় অবস্থানের কথা জানান মোদী। শিবসেনা ও অন্যান্য দল সেখানে শরিকদের সঙ্গে সময়ে সময়ে আলোচনা না করে এগোনোর জন্য ক্ষোভ জানায়। দরকারে পড়লে তবেই শরিকদের ডাক পরে, এমন খোঁচাও দেন শিবসেনার অক্ষয় রাউত। যদিও শেষ পর্যন্ত শরিকরা সকলে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাসই দিয়েছে এ দিন। এর আগে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীর মতো মোদীর সমালোচকরাও। সেখানে কোনও বিরোধী সুর শোনা যায়নি বলে খবর। বিজেপি জানে, নিয়ম অনুসারে বসুন্ধরা বা ব্যপম কাণ্ডের মতো রাজ্যের বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যায় না। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে বিরোধীরা। ললিত-প্রশ্নে আলোচনার জন্য কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব স্থগিতের আর্জি জানিয়েছে। কংগ্রেসের আক্রমণ ভোঁতা করে দিতে প্রধানমন্ত্রীও আগে থেকেই বলছেন, ‘‘আমরা সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।’’ এর পাশাপাশি কয়েক দফা কৌশলও ছকে রেখেছে মোদী সরকার। কী সেই কৌশল?
এক, প্রথমেই সুষমাকে দিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ানো। দুই, ললিত মোদীর বিরুদ্ধে সরকার যে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করছে, তা তুলে ধরা। তিন, এর পরেও বসুন্ধরা-সুষমাদের নিয়ে বিরোধীরা বিবাদ বাধালে ললিত মোদীর টুইটে সনিয়া গাঁধীর বোনের সঙ্গে রফার প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলা। চার, ব্যপম কাণ্ডে এই যু্ক্তি তুলে ধরা যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে করছে। আইন আইনের পথেই চলবে। পাঁচ, কংগ্রেস আমলের দুর্নীতি নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলিকেও টেনে আনা। এই সূত্রেই বিজেপি আজ প্রাক্তন মন্ত্রী দিগম্বর কামাতের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সামনে এনেছে।
বিজেপির আরও একটি কৌশল অবশ্যই বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানো ও কংগ্রেসকে একঘরে করে ফেলা। সেই চেষ্টা তারা অনেক আগে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছে। এবং তার ফলও মিলতে শুরু করেছে কিছু-কিছু। যেমন সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব আজ বলেই ফেলেন, ‘‘জমি বিলের ব্যাপারে কিছু সংশোধন মেনে সরকারের এগিয়ে যাওয়া উচিত।’’ জেডি(ইউ)-এর শরদ যাদব বলেন, ‘‘সংসদ চলা উচিত। সরকারেরও উচিত সব বিষয়ে আলোচনা করতে দেওয়া।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি বিলের বিরোধিতায় অনড় ও ব্যপম নিয়ে সরব। কিন্তু সুষমার বিষয়ে তিনি নীরব। তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানান, একুশের সমাবেশের পরে ২২ তারিখ দলের সাংসদরা বাদল অধিবেশনে যোগ দেবেন। সংসদে তাঁরা কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা ও নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হবেন। দুর্নীতির প্রসঙ্গেই ললিত মোদীর বিষয় নিয়ে তাঁরা বিদেশমন্ত্রী সুষমার ইস্তফা দাবি করবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য অবস্থান স্পষ্ট করেননি সুদীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই সব ব্যাপারে সংসদে নিজেদের মধ্যে কথা বলে অবস্থান ঠিক করব।’’
এই পরিস্থিতিতে সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ বলেন, ‘‘সংসদ চলবে কি না, মাত্র কয়েকটি বিরোধী দল তা ঠিক করে দিতে পারে না। ২৯টি দল সংসদ চলার পক্ষে। এ ব্যাপারে তারা কংগ্রেসের পাশে নেই।’’
তবে হাল ছাড়ছে না কংগ্রেস ও বামেরা। মহিলা কংগ্রেস কাল অধিবেশন শুরুর আগে যন্তর-মন্তরে ধর্না ও সংসদ ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে। ছয় বাম দল আজ মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সরকার এ বারে সংসদের কার্যসূচিই এত দুর্বল রেখেছে যে তাতেই স্পষ্ট, সরকার ধরে নিয়েছে সংসদ চলবে না। এর জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী। তিনি আগে মুখ খুললে এই অবস্থা হতো না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy