Advertisement
E-Paper

ঘাটতিতে লাগাম দিতে ব্যর্থ জেটলি

চলতি আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছিলেন জেটলি। কিন্তু গ্রাম-গরিবের মন জয়ে অর্থ ঢালতে হয়েছে। ভোটের আগের বছর বলে খরচ কমানোরও জায়গা পাননি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩৯
মুখোমুখি: লোকসভায় বাজেট পেশের পরে সাংবাদিকদের সামনে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পিটিআই

মুখোমুখি: লোকসভায় বাজেট পেশের পরে সাংবাদিকদের সামনে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পিটিআই

কথা রাখা যাবে, না যাবে না? টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্যি হল। রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে পারলেন না অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে অটল বলে দাবি করা সত্ত্বেও চলতি আর্থিক বছরে তো বটেই, আগামী অর্থবর্ষেও রাজকোষ ঘাটতি বাড়িয়ে রাখতে হল জেটলিকে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে রাজকোষ কতখানি লাগামের মধ্যে থাকবে, তা নিয়ে আজ জেটলি নিজেই সংশয় তৈরি করলেন। মেনে নিলেন, তেলের দাম ‘সহ্যসীমা’ ছাড়াতে চলেছে।

চলতি আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছিলেন জেটলি। কিন্তু গ্রাম-গরিবের মন জয়ে অর্থ ঢালতে হয়েছে। ভোটের আগের বছর বলে খরচ কমানোরও জায়গা পাননি। ফলে ঘাটতি বেড়ে ৩.৫ শতাংশে পৌঁছচ্ছে। আগামী বছর বা ২০১৮-’১৯-এ ঘাটতি ৩ শতাংশে নামানোর কথা বলেছিলেন। সেখানেও ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা নিচ্ছেন জেটলি। তাঁর ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ২০২০-’২১-এর আগে রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে নামানো সম্ভব
হবে না।

প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশি রেটিং এজেন্সিগুলি এর ফলে নেতিবাচক মনোভাব নেবে না তো? রেটিং সংস্থা মুডি’জ অবশ্য বলেছে, ৩.৩ শতাংশ ঘাটতির লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব। তাদের আন্দাজের সঙ্গেও তা মিলছে। কিন্তু অন্য দুই রেটিং সংস্থা কী মনোভাব নেবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে বলে পেট্রোল-ডিজেলের দামও লাফিয়ে বাড়ছে। জেটলি লিটার প্রতি ২ টাকা হারে উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছেন বটে। কিন্তু ঘাটতি সামাল দিতে ২ টাকা সেস বাড়িয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের সুরাহা হয়নি। উৎপাদন শুল্ক থেকে আয় রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হত। সেস বাবদ পুরো আয়ই কেন্দ্রের।

তা সত্ত্বেও দুশ্চিন্তা যে থাকবে, মেনে নিয়ে জেটলি বলেছেন, ‘‘৬০ ডলার পর্যন্ত আমাদের সহ্যসীমার মধ্যে। তার বেশি হলে ধাক্কা লাগবে। এখনও ধাক্কা সামলে নিচ্ছি। আরও বাড়লে তা-ও সামলাতে হবে।’’ আর্থিক সমীক্ষার পরে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন বলেছিলেন, অশোধিত তেলের দাম যে ব্যারেল প্রতি ৫৫ ডলার ছাড়াবে, তা তাঁরা আঁচ করতে পারেননি। অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পেট্রোপণ্যে ভর্তুকিও কমাতে পারেননি জেটলি। উল্টে সামান্য বাড়াতে হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ঘাটতি বাড়ানো ছাড়া রাস্তা ছিল না বলেই অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি। কারণ জিএসটি বাবদ আয় আশানুরূপ নয়। অর্থসচিব হাসমুখ অঢিয়ার হিসেবে, চলতি বছরে হিসেবের তুলনায় জিএসটি থেকে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা কম আয় হবে। জিএসটি-র আয় এক মাস পরে সরকারের ঘরে ঢোকে। ফলে আগামী বছরেও ১১ মাসের আয় দিয়ে ১২ মাসের বাজেট তৈরি করতে হচ্ছে জেটলিকে।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘ঘাটতির এই অঙ্ক বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরপর দু’বছর ঘাটতির লক্ষ্য ছুঁতে না পারায়, ঘাটতি কমানোর দায়বদ্ধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠবে।’’ জেটলির যুক্তি, ঘাটতি বাড়ালেও আর্থিক শৃঙ্খলা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ মেনে তিনি জিডিপি-র তুলনায় ঋণের হার ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। আয়-ব্যয়ের ঘাটতি মেটাতে হয় ঋণ করে। ঘাটতি বাড়়লে ঋণের পরিমাণ কোন জাদুমন্ত্রে কমবে, তার জবাব মেলেনি।

Budget Union Budget Central Budget Budget 2018 Budget 2018-19 বাজেট ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy