নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে এ বার সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার পথে হাঁটতে পারে কেন্দ্র। নানা মহলে জল্পনা এমনটাই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আসন্ন বাদল অধিবেশনেই অভিযুক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, যদি বিচারপতি বর্মা নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তা হলে জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনেই তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট (বরখাস্ত) প্রস্তাব আনার কথা ভাববে কেন্দ্র। বর্মার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া তিন বিচারপতির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবসরগ্রহণের দিনকয়েক আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জিও জানিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। অন্য দিকে, আগেই পদত্যাগ করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারপতি বর্মা। নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তিনি। ফলে এ বার সংসদে ইমপিচমেন্টের পথেই হাঁটবে সরকার।
আরও পড়ুন:
ইমপিচমেন্ট কী? ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) নম্বর অনুচ্ছেদে আইনের কাছে জবাবদিহি সম্পর্কে বলা হয়েছে, হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে রাজ্যসভায় কমপক্ষে ৫০ জন সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন। আর লোকসভায় প্রয়োজন ১০০ জনের স্বাক্ষর। যদি প্রস্তাবটি উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাশ হয়, তা হলেই পরবর্তী ধাপ হিসাবে লোকসভার স্পিকার অথবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ করবেন। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের এক জন বর্তমান বিচারপতি, হাইকোর্টের এক প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মনোনীত কোনও বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ থাকবেন। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরেই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে সরকার।
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি সেই রিপোর্টের তথ্য পেতে আরটিআই আইনের আওতায় আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী অমৃতপাল সিংহ খালসা। যদিও সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের তথ্য আধিকারিক।