গোধরায় ২০০২ সালে সাবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রেল পুলিশের ন’জন কনস্টেবলের বরখাস্তের নির্দেশ বহাল রাখল গুজরাত হাই কোর্ট। সম্প্রতি এ বিষয়ে বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) নানাবতীর নেতৃত্বাধীন কমিশনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে এই নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
ঘটনার দিন ওই ন’জন পুলিশ কনস্টেবলের ডিউটি ছিল সাবরমতী এক্সপ্রেসে। কিন্তু ট্রেনটি ছ’ঘণ্টা দেরিতে চলায় তাঁরা সাবরমতী এক্সপ্রেসে না উঠে অন্য একটি ট্রেনে অহমদাবাদে ফিরে গিয়েছিলেন। নানাবতী কমিশন তার পর্যবেক্ষণে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিল, ‘‘ওই পুলিশকর্মীরা যদি সে দিন কর্তব্য পালন করতেন, তা হলে এত বড় ঘটনা (সাবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ) এড়ানো সম্ভব হত।’’ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়েছিল অভিযুক্ত ন’জন পুলিশ কনস্টেবলকে।
প্রসঙ্গত, ২০০২-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে করসেবকদের পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। ট্রেনের এস-৬ কোচের অগ্নিকাণ্ডে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অযোধ্যা থেকে ফেরা করসেবক। সেই ঘটনার পরই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে গুজরাত জুড়ে। অভিযোগ, সরকারি মদতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালায় সে রাজ্যের মুসলিমদের উপর। দাঙ্গার বলি হন হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। তিনিও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ঘটনার তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল। গুজরাত সরকারের তরফে গঠন করা হয় একাধিক কমিশনও।
আরও পড়ুন:
গোধরাকাণ্ডের তদন্তে গুজরাত সরকারের গঠিত নানাবতী-মেহতা কমিশন মত দিয়েছিল, ট্রেনে আগুন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্র ছিল। গোধরা অগ্নিকাণ্ডের ৯ বছর পরে ২০১১-র পয়লা মার্চ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গোধরাকাণ্ডে ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাদের মধ্যে ১১ জনের ফাঁসির সাজা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ২০ জনের। মুক্তি পান অভিযুক্ত ৬৩ জন। শাস্তির রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দোষী সাব্যস্তেরা গুজরাত হাইকোর্টে একাধিক মামলা করেছিল। ২০১৭-র অক্টোবরে গুজরাত হাই কোর্ট ১১ জনের ফাঁসির সাজা রদ করে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিয়েছিল। ২০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছিল। যদিও গোধরা পরবর্তী দাঙ্গাপর্বে দোষী সাব্যস্ত অনেকেই ইতিমধ্যে গুজরাতের বিজেপির সরকারের সম্মতিতে সাজার মেয়াদ শেষের আগেই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন।