Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্দুক তুলে নেওয়া হাতে আজ শান্তির বার্তা

একেই হয়তো বলে বোধোদয়! এক সময় তিনি নিজে বন্দুক হাতে ‘আজাদ কাশ্মীর’-এর জন্য লড়াই করেছেন। সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে। হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে যে ভাবে কাশ্মীর জ্বলছে, সেই প্রসঙ্গ তুলেই তাঁর মুখে শোনা গেল সম্পূর্ণ অন্য সুর।

অশান্ত কাশ্মীর। ইনসেটে জুনেইদ কুরেশি। ফাইল চিত্র।

অশান্ত কাশ্মীর। ইনসেটে জুনেইদ কুরেশি। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ১৬:২৬
Share: Save:

একেই হয়তো বলে বোধোদয়!

এক সময় তিনি নিজে বন্দুক হাতে ‘আজাদ কাশ্মীর’-এর জন্য লড়াই করেছেন। সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে। হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে যে ভাবে কাশ্মীর জ্বলছে, সেই প্রসঙ্গ তুলেই তাঁর মুখে শোনা গেল সম্পূর্ণ অন্য সুর। জেহাদের নয়, সে সুর শান্তির আলোচনার। যাঁর মুখে এই কথা শোনা গিয়েছে তিনি আর কেউ নন, জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা জুনেইদ কুরেশি। তিনিও এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার ছেলে। দীর্ঘ ২৬ বছর পরে তাঁর উপলব্ধি: জেহাদের মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর সমস্যা মেটানো সম্ভব। আর এ কথাই তিনি বার বার বোঝাতে চেয়েছেন কাশ্মীরের মানুষদের।

বর্তমানে কুরেশির বাস আমস্টারডমে। তিনি নিজে এক জন মানবাধিকার কর্মী। নিজের রাজ্য ছেড়ে বহু দূরে ডাচদের শহরে বসে নিজের শহর জ্বলতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন জুনেইদ। এই ক্ষোভ দেশের বিরুদ্ধে নয়, এই ক্ষোভ তাঁর রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রশ্ন: ‘‘বন্দুক হাতে উঠিয়ে জেহাদ ঘোষণা করা যদি এতই পুণ্যের কাজ হয়, তা হলে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সন্তানেরা কেন সেই পুণ্যের কাজ করছেন না? কেন তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়া, আমেরিকা, লন্ডনে?’’ বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে যে ভাবে তপ্ত হয়ে উঠেছে কাশ্মীর, সংঘর্ষ, গুলিতে যে ভাবে নিরাপত্তাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে, সে প্রসঙ্গেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের তুলোধোনা করেছেন তিনি।

তাঁর কথায়, “২৬ বছর আগে আমরা বন্দুক নিয়ে জেহাদে নেমেছিলাম, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। শুধু নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে।” কাশ্মীরের ভয়ানক পরিস্থিতি দেখে জুনেইদের মুখে শোনা গিয়েছে আশঙ্কার কথা। তাঁর মতে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তা এখনই আটকানো দরকার। কাশ্মীরের মানুষের বোঝা উচিত, বন্দুক, সংঘর্ষ, হামলা নয়, আলোচনার মধ্য দিয়েই একমাত্র সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।

একটা বুরহানকে মারার পর যে ভাবে পুরো উপত্যকা তপ্ত হয়ে উঠেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে যে ভাবে নিহত হয়েছে নিরীহ মানুষ, যে ভাবে পুলিশকে পাল্টা আক্রমণ করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান জুনেইদ। তিনি বলেন, “একটা বুরহান মরবে, হাজারটা বুরহান জন্ম নেবে। কিন্তু সমস্যা কি মিটবে? না, মিটবে না। ফের রক্তপাত হবে। ফের কাশ্মীর জ্বলবে। বুরহানের মতো আরও অনেকের শেষটা বুলেটেই হবে। এ ভাবে কাশ্মীরী যুবকদের মরতে দেখে দুঃখ হয়। কাশ্মীরের যুবকদের এখনই বোঝা উচিত এ ভাবে সমস্যা মিটবে না।”

জুনেইদের মন্তব্য: “বুরহান আমার ভাইয়ের বয়সী। মাত্র ২২ বছর বয়স। সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি বা অভিনেতা হতে পারত। তার অনেক সম্ভাবনাময় পথ ছিল। কিন্তু এই পথ বেছে নেয়নি সে।”

বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। কাশ্মীরের মানুষের কাছে টুইটে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে, ওই সব নেতার প্ররোচনায় পা না দিয়ে শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করুক রাজ্যবাসী। পাশাপাশি, এটাও তাঁদের বুঝতে হবে, নেতাদের সন্তানেরা বহাল তবিয়তে সুরক্ষিত ভাবে বিদেশে কাটাচ্ছে, আর বন্দুক হাতে নিয়ে জেহাদ করতে গিয়ে গরিব পরিবারের ছেলেগুলো বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে।

শুধু কাশ্মীর উপত্যকাই নয়, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান আর বাংলাদেশেও রক্তপাত অব্যাহত। অব্যাহত শান্তির সন্ধানে অবিরাম প্রয়াসেরও। এই প্রয়াসের মধ্যেই জুনেইদের এই বোধোদয় কি সদর্থক কোনও বার্তা বয়ে আনবে?

আরও খবর...

এখনও অশান্ত ভূস্বর্গ, মেহবুবার সুরে শান্তি ফেরানোর ডাক গিলানিরও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Junaid Qureshi Kashmir Burhan wani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE