Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
COVID Vaccine

টিকার ব্যবধানে মতপার্থক্য? দাবি ওড়ালেন হর্ষ বর্ধন

সূত্রের খবর, বৈঠকে দুই ডোজ়ের ব্যবধান দু’মাস, তিন মাস এমনকি পাঁচ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ হয়েছিল।

হর্ষ বর্ধন

হর্ষ বর্ধন ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্তে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্যের অভিযোগ খারিজ করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।

অভিযোগ উঠেছে, সিরাম ইনস্টিটিউটের এই টিকার দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করার বিষয়টি নিয়ে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই) গোষ্ঠীতে ঐকমত্য হয়নি। তা সত্ত্বেও একতরফা ভাবে কেন্দ্র ওই সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল। রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধীদের দাবি, যথেষ্ট প্রতিষেধকের অভাব এবং পরিকল্পনা রূপায়ণের ব্যর্থতা চাপা দিতেই দুই ডোজ়ের ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদী সরকারের আমলারা। কিন্তু হর্ষ বর্ধন এ দিন দাবি করেন, বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতেই দুই ডোজ়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছিল। কেউ তখন এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাননি। এই বিতর্কের মধ্যেই এনটিএজিআই-এর প্রধান এন কে অরোড়া জানিয়েছেন, করোনার ডেল্টা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কোভিশিল্ডের একটি ডোজ় ৬১% পর্যন্ত কার্যকরী বলে ভারতেরই একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

গোড়ায় কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল ২৮ দিন। তা বাড়িয়ে ৮-১২ সপ্তাহ করা হয়। পরবর্তী ধাপে গত ১৩ মে সরকার কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ১২-১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সুপারিশ করে। সেই সময়েই প্রশ্ন ওঠে, যথেষ্ট টিকার জোগান নেই বলেই কি ব্যবধান বাড়িয়ে চাহিদা কম করার কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার? স্বাস্থ্য মন্ত্রক পাল্টা যুক্তিতে জানিয়েছিল, ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের টিকার (ভারতে যা কোভিশিল্ড) দুই ডোজ়ের ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণেই ভারত ওই পথে হাঁটল। কিন্তু গত কাল সংবাদমাধ্যমে এনটিএজিআই-এর সদস্য ম্যাথু ভার্গিস বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনেই কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান ৮-১২ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সরকার একতরফা ভাবে তা বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করে।” এনটিএজিআই-এর আর এক সদস্য এম ডি গুপ্তের বক্তব্য, “১২-১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নিলে কী হতে পারে, এ নিয়ে কারও কোনও ধারণা ছিল না। অনেকে বলেন, এত দেরিতে দ্বিতীয় ডোজ় নিলে সেই প্রতিষেধকের কোনও কার্যকরী প্রভাব শরীরে পড়বে না।” তা সত্ত্বেও সরকার ১২-১৬ সপ্তাহই ব্যবধান রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বলে তিনি দাবি করেন।

এনটিএজিআই-এ মতানৈক্যের অভিযোগ আজ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। হর্ষ বর্ধন বলেছেন, “বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে স্বচ্ছ ভাবে দুই ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান ১২-১৬ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাজনীতি হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।” গোষ্ঠীর প্রধান অরোড়াও বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবস্থা খুব স্বচ্ছ। এনটিএজিআই-এ ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও বিরুদ্ধ মত ছিল না।’’ তবে ওই গোষ্ঠীরই সদস্য চিকিৎসক জয়প্রকাশ মুলিইল-এর কথায়, “ব্যবধান বাড়ানোর প্রশ্নে সকলেই সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু কত দিনের ব্যবধান আদর্শ হবে, তা নিয়ে নানা মত ছিল। অনেকের যুক্তি ছিল, ব্যবধান বেশি হলে দ্বিতীয় ডোজ় অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সে সময়ে আমাদের হাতে যা তথ্য ছিল, তাতে বলা হচ্ছিল— দেরি করে দ্বিতীয় ডোজ় দিলে কোভিশিল্ড বেশি কার্যকর হয়।”

সূত্রের খবর, বৈঠকে দুই ডোজ়ের ব্যবধান দু’মাস, তিন মাস এমনকি পাঁচ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবধানে প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জয়প্রকাশের কথায়, “সার্বিক ভাবে দ্বিতীয় ডোজ় দেরি করে দেওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছিল এনটিএজিআই। কিন্তু কত দিন পরে তা দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের আমলারা।” সেই সময়ে প্রতিষেধকের অভাব চলায় ব্যবধান বাড়িয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়ের আওতায় আনাটাই লক্ষ্য ছিল সরকারের।

এ দিকে, আজ কেন্দ্র জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকে বাছুরের রক্ত নেই। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত কিছু পোস্ট দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেন্দ্রের বক্তব্য, তাতে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Harsh Vardhan COVID Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE