Advertisement
E-Paper

মোদীর ভবিষ্যৎ-বিবৃতি থেকে ট্রাম্পের ‘বড়’ ঘোষণা! তবু তার পরেও ভেস্তে গেল বাণিজ্যচুক্তি, পড়ে নিন সাত মাসের সাতকাহন

মঙ্গলবার সরকারি ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। তাতে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল (ভারতীয় সময়) থেকে আমেরিকায় রফতানি করা ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৩২
Here is the timeline of how India-America tariff talks failed

ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল কিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে মদত দিচ্ছে ভারত! এই অভিযোগে চলতি মাসের গোড়াতেই ভারতীয় পণ্যে জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। মঙ্গলবার সরকারি ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। তাতে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল (ভারতীয় সময়) থেকে আমেরিকায় রফতানি করা ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে।

চলতি বছরে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের আলোচনা কবে থেকে শুরু হয়েছিল, কোথায় গিয়ে তা ভেস্তে গেল, দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

ফেব্রুয়ারি: মোদীর ইঙ্গিত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলা হবে। শুধু তা-ই নয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দু’দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহর ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেও কাজ করবে বলে জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। ভবিষ্যতে আমেরিকা থেকে জ্বালানি কেনারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

মার্চ: ওয়াশিংটনে পীযূষ গয়াল

ওয়াশিংটনে যান কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। দেখা করেন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে। আবার মার্চেই দিল্লি আসেন আমেরিকার প্রতিনিধিরা। ভারত জানায়, আলোচনা সঠিক পথেই এগোচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য রিপোর্ট প্রকাশ করে আমেরিকা। সেখানে ভারতে আমেরিকার পণ্যে চড়া শুল্কের কথা বলা হয়।

এপ্রিল: ভারতে জেডি ভান্স

ভারতে আসেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। ভারত জানায়, নয়া শুল্কনীতি ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, তার আগে ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি হয়ে যেতে পারে।

মে: মার্কিন সফরে গয়াল

বাণিজ্যমন্ত্রী গয়াল আবার আমেরিকা যান। মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদী ছিল ভারত।

জুন: ট্রাম্পের ‘বড়’ ঘোষণা

৩ জুন মার্কিন বাণিজ্য সচিব লুটনিক জানান, ভারত-আমেরিকার মধ্যে আলোচনা ঠিকঠাকই এগোচ্ছে। শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ‘বড়’ বাণিজ্যচুক্তির কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্পও। কিন্তু তার পরেই মার্কিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ভারতীয় প্রতিনিধিরা জানান, বাণিজ্য-আলোচনা সাময়িক ভাবে থমকে গিয়েছে। কিছু কৃষিপণ্যে আমদানি শুল্ক নিয়ে জট তৈরি হয়েছে। এই মাসেই ওড়িশায় একটি জনসভায় গিয়ে মোদী জানান, ট্রাম্প তাঁকে ওয়াশিংটনে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের আমন্ত্রণ নাকচ করার কারণ হিসাবে মোদী জনসভায় বলেন, ‘‘ওড়িশায় জগন্নাথের মাটিতে আসতে চাই বলেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’’

জুলাই: ২৫% শুল্ক চাপল

সমাধানসূত্র না-বেরোনোয় দিল্লি ফিরে আসেন ভারতীয় প্রতিনিধিরা। ৪ জুলাই বাণিজ্যমন্ত্রী গয়াল বলেন, সময়সীমার (যে সময় ট্রাম্প বেঁধে দিয়েছিলেন) চাপে ভারত বাণিজ্যচুক্তি করবে না। আগে জাতীয় স্বার্থ মাথায় রাখা হবে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আবার আমেরিকা যান ভারতীয় প্রতিনিধিরা। ঘটনাচক্রে, সেই সময়েই সংসদে প্রথম বার ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন মোদী। বলেন, কোনও নেতার চাপে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বন্ধ হয়নি! দীর্ঘ দিন ধরে ট্রাম্প দাবি করে আসছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির নেপথ্যে তিনিই রয়েছেন। প্রকারান্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই দাবিও উড়িয়ে দিয়েছিলেন মোদী। এর পর ৩০ জুলাই ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। হুমকি দেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা না-থামায়, তা হলে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে।

অগস্ট: জরিমানা-সহ ৫০% শুল্ক চাপল

৭ অগস্ট ভারতীয় পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপায় আমেরিকা। সঙ্গে জরিমানা। বিবৃতি দিয়ে ভারত জানায়, কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা হবে না। রাশিয়া থেকে তেল কেনার যে কারণ আমেরিকা দেখিয়েছে, তাকেও ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছে নয়াদিল্লি। ২৫-২৯ অগস্টের মধ্যে ভারত সফরে আসার কথা ছিল মার্কিন প্রতিনিধিদের। পরে তা-ও বাতিল হয়ে যায়।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৭ অগস্ট আমেরিকার ইস্টার্ন জ়োনের (রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এই জ়োনের অন্তর্গত) সময় অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে নয়া শুল্ক। যা ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার সকাল ৯টা ৩১ মিনিট। সাত পাতার ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ওই সময়ের পর থেকে আমেরিকার বাজারে কোনও ভারতীয় পণ্য প্রবেশ করলে তার জন্য বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ ‘বাড়তি শুল্ক’ (আদতে জরিমানা) কার্যকর করার কারণও স্পষ্ট জানিয়েছে ট্রাম্প সরকার।

Donald Trump Tariff War India-US Relationship PM Narendra Modi Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy