Advertisement
E-Paper

সাক্ষরতার হার এখনও ১০০% হয়নি, তা-ও হিমাচল প্রদেশের জুটল ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্যের স্বীকৃতি! কোন মাপকাঠিতে?

হিমাচল প্রদেশ ছাড়াও তিন রাজ্য এবং এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে এই রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে কোথাও সাক্ষরতার হার ১০০ শতাংশ নয়। কী ভাবে স্থির হয় কোনও রাজ্য ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ কি না?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৪৪
‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্যের স্বীকৃতি পেল হিমাচল প্রদেশ।

‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্যের স্বীকৃতি পেল হিমাচল প্রদেশ। ছবি: সংগৃহীত।

হিমাচল প্রদেশকে সম্প্রতি ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিয়ে ভারতে পঞ্চম কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এমন স্বীকৃতি পেল। হিমাচল প্রদেশের আগে এই তকমা পেয়েছে গোয়া, লাদাখ, মিজ়োরাম এবং ত্রিপুরা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই পাঁচটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে কোথাওই ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা নেই। হিমাচলে সাক্ষরতার হার ৯৯.৩ শতাংশ বলে দাবি করা হয়। একই রকম ভাবে গোয়ায় ৯৯.৭২ শতাংশ, মিজ়োরামে ৯৮.২ শতাংশ, লাদাখে ৯৭ শতাংশ এবং ত্রিপুরায় ৯৫.৬ শতাংশ মানুষ সাক্ষর। তা-ও এই রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ তকমা দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যদি সাক্ষরতা হার ১০০ শতাংশ না থাকে, তবে ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্য কী ভাবে বলা যায়? কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের হিসাবে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের সাক্ষরতার হার ৯৫ শতাংশ হয়ে গেলেই সেটিকে ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সাক্ষরতা বলতে শুধু পড়া, লেখা ও গণনাকেই বোঝায় না, সেই সঙ্গে ডিজিটাল এবং অর্থনৈতিক সাক্ষরতাকেও বোঝায়। ডিজিটাল সাক্ষরতার অর্থ, তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহারের কৌশল শেখা। অর্থনৈতিক সাক্ষরতার অর্থ দৈনন্দিন জীবনে আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সঞ্চয়ের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা।

কেন্দ্রীয় সরকার আলাদা ভাবে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ বলে ঘোষণা করে না। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তৈরি করা মাপকাঠি অনুসারে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কাজ করে। সেই মাপকাঠি পূরণ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিজে থেকেই নিজেদের ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ বলে ঘোষণা করতে পারে। পরে কেন্দ্র তাতে স্বীকৃতি দেয়। যেমন, গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে হিমাচল প্রদেশ-সহ চার রাজ্য এবং এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ হওয়ার নেপথ্যে বার্ধক্য শিক্ষার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এর জন্য ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘উল্লাস’ প্রকল্প চালু করে, যার লক্ষ্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সাক্ষরতা ও আজীবন শিক্ষার প্রসার ঘটানো। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০ শতাংশ সাক্ষরতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। মূলত ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সি যাঁরা স্কুলে যাননি, তাঁদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতেই এই উদ্যোগ। ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ রাজ্য হওয়ার মাপকাঠি হিসাবে ৯৫ শতাংশ সাক্ষরতার হারের কথাও উল্লেখ রয়েছে এখানেই।

‘উল্লাস’ প্রকল্পের আওতায় বয়স্কদের পড়া, লেখা, সাধারণ কিছু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগের মতো হিসাব কষার শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে যে পাঠ দেওয়া হয়, সেগুলিই মূলত এ ক্ষেত্রে বয়স্কদের দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঘড়ির হিসাব, ক্যালেন্ডারের হিসাব, নগদ অর্থের ব্যবহার, ব্যাঙ্কের চেক লেখা, অনলাইনে নিরাপদ লেনদেনের বিষয়গুলি শেখানো হয়। এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এবং অনলাইনে উভয় ক্ষেত্রেই এই পাঠ দেওয়া হয়। তার পরে নিজেদের পছন্দ মতো ভাষায় পড়া, লেখা এবং হিসাবের উপর ১৫০ নম্বরের একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানে পাশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং’ (এনআইওএস) থেকে একটি শংসাপত্র দেওয়া হয়।

কোনও রাজ্যের ‘সম্পূর্ণ সাক্ষর’ হওয়ার মাপকাঠি পূরণ হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য প্রশাসনের তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ অনেকাংশে নির্ভর করে এনআইওএস-এর শংসাপত্রের উপর। যাঁদের কাছে ওই শংসাপত্র নেই, তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ যে সব রাজ্যে ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে শিক্ষার হার বেশি ছিল, বা যে রাজ্যগুলি আয়তনে ছোট কিংবা জনসংখ্যা কম, সেখানে এই কাজ তুলনামূলক দ্রুত হয়। ২০১১ সালের হিসাব অনুসারে, দেশে সাক্ষরতার গড় হার ছিল ৭৪ শতাংশ। হিমাচল, গোয়া, মিজ়োরাম এবং ত্রিপুরা— চার রাজ্যেই সাক্ষরতার হার ছিল দেশের গড় হারের তুলনায় বেশি। ওই সময়ের জনগণনা অনুসারে, হিমাচল প্রদেশ, গোয়া, মিজ়োরাম এবং ত্রিপুরায় সাক্ষরতার হার ছিল যথাক্রমে ৮২.৮ শতাংশ, ৮৮.৭ শতাংশ, ৯১.৩ শতাংশ এবং ৮৭.২ শতাংশ।

himachal pradesh Ministry of Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy