বিয়ের এক মাস পরই খুন হন অন্ধ্রপ্রদেশের যুবক তেজেশ্বর! তাঁর খুনের নেপথ্যে পরতে পরতে রহস্য। এই খুনের ঘটনায় জুড়ল ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক! পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, তেজেশ্বরকে খুন করতে বড় পরিকল্পনা এঁটেছিলেন তাঁর স্ত্রী ঐশ্বর্যই। শুধু তিনি একা নন, তাঁর মা-বাবা এবং ‘প্রেমিক’-এর নামও জড়িয়েছে খুনের সঙ্গে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে তেজেশ্বরের খুনের সঙ্গে জড়িয়ে!
গত ১৮ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন তেজেশ্বর। তিন দিন পর খাল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর স্ত্রীই তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে আভাস মিলেছে তদন্তকারীদের সূত্রে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, তেজেশ্বরের শাশুড়ি সুজাতা একটি ব্যাঙ্কে সাফাইকর্মীর কাজ করতেন। সেই সময়ই তিরুমল রাও নামে ওই ব্যাঙ্কেরই এক অফিসারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ২০১৬ সাল থেকে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। এক সময় অসুস্থতার কারণে সুজাতা ছুটিতে যান। তখন তাঁর জায়গায় ওই ব্যাঙ্কে কাজ শুরু করেন মেয়ে ঐশ্বর্য। তিরুমলের সঙ্গে তিনিও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন:
মেয়ে এবং তিরুমলের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে রাগারাগি করেন সুজাতা। মেয়েকে ওই সম্পর্ক থেকে সরে এসে তেজেশ্বরকে বিয়ে করতে বলেন। এই নিয়ে মা এবং মেয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। উল্লেখ্য, তিরুমলের পাশাপাশি তেজেশ্বরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন ঐশ্বর্য। ঝামেলার পর ঐশ্বর্য বিয়েতে রাজি হন। ঠিক হয় বিয়ের তারিখ। গত ফেব্রুয়ারিতে তেজেশ্বর এবং ঐশ্বর্যের বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের আগে হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যান ঐশ্বর্য। ফলে বিয়ে পিছিয়ে যায়। পরে অবশ্য গত ১৮ মে বিয়ে হয় ঐশ্বর্য এবং তেজেশ্বরের।
জেলা পুলিশের প্রধান টি শ্রীনিবাস রাও জানিয়েছেন, বিয়ের পরেও তিরুমলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন ঐশ্বর্য। তেজেশ্বর যখন অফিসে থাকতেন, তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দু’জনে ভিডিয়ো কলে গল্প করতেন। এমনকি বিয়ের দিনেও দু’জনের মধ্যে কথা হয়। ঐশ্বর্য এবং তিরুমলের ফোনের কলরেকর্ড ঘেঁটে এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, তেজেশ্বরকে হত্যা করার জন্য ‘ভাড়াটে খুনি’দের জোগাড় করেছিলেন তিরুমলই। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে চেয়ে তিন জন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেই তিন জনকেই খুনের কাজে লাগান তিরুমল। তিনি জানান, যদি তেজেশ্বরকে তাঁরা খুন করতে পারেন তবে ঋণ মঞ্জুর হবে, পাশাপাশি মিলবে আরও কিছু নগদও! তিরুমলের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিন জন।
এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, খুনিদের মধ্যে এক জন জমি জরিপের কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনিই তেজেশ্বরকে একটি জমি জরিপের অজুহাতে নিয়ে যান। একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়। সেই গাড়িতে চালকের আসনের পাশেই বসেছিলেন তেজেশ্বর। তখন আচমকা পিছন থেকে তাঁর মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়। তার পরে গলা কেটে খুন করা হয় তেজেশ্বরকে এবং দেহ ফেলে দেওয়া হয় খালের জলে। খুনিরা রক্তমাখা পোশাক খুলে নতুন পোশাক পরে এলাকা ছাড়েন। পুলিশ জানতে পেরেছে, তিরুমলই নতুন পোশাক কিনে দিয়েছিলেন। খুনের পর তেজেশ্বরের দেহ ভিডিয়ো কলে তিরুমলকে দেখান খুনিরা।
তেজেশ্বরকে খুনের পর পালানোর পরিকল্পনাও ছকে রেখেছিলেন তিরুমল এবং ঐশ্বর্য। তাঁরা আশা করেছিলেন, তেজেশ্বরের দেহ খুঁজে পাবে না পুলিশ। পরিকল্পনা ছিল, লাদাখে পালিয়ে যাবেন দু’জনে। তার জন্য ২০ লাখ টাকা ঋণও নিয়েছিলেন তিরুমল। প্রথমে লাদাখ, তার পরে আন্দামানে গা-ঢাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেইমতো টিকিট বুকও করা হয়। কিন্তু তেজেশ্বর নিখোঁজ হওয়ার পরই তাঁর পরিবারের সন্দেহ পড়ে ঐশ্বর্যের উপর। পুলিশকে সেই কথা জানায়ও তারা। ফলে পালানোর পরিকল্পনা সেখানেই ভেস্তে যায় তিরুমল এবং ঐশ্বর্যের।
তেজেশ্বরকে খুন করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেছিলেন ঐশ্বর্য এবং তিরুমল। বিয়ের পর থেকে পাঁচ বার খুনের চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। যদিও কোনও বারই সফল হননি ঐশ্বর্যরা। তাই শেষ পর্যন্ত খুনিদের ভাড়া করা হয়। পুলিশ আরও জানতে পারে, তেজেশ্বরকে খুন করতে মেঘালয়ে রাজা রঘুবংশীর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাও অবলম্বন করার কথা ভেবেছিলেন ঐশ্বর্যরা। পরে তা বাতিল করেন।