Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বনমন্ত্রীর সফরেই গন্ডার হত্যা

বিজেপি জোট সরকারের আমলেও শুরু হল গন্ডার হত্যা। তাও আবার সদ্য দায়িত্ব নেওয়া বনমন্ত্রীর কাজিরাঙা সফরকালেই ঘটল এই হত্যাকাণ্ড। এই নিয়ে চলতি বছরে কাজিরাঙায় আটটি গন্ডার মারা হল।

কাজিরাঙার বনমন্ত্রী প্রমীলা রানী ব্রহ্ম। শুভময় ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

কাজিরাঙার বনমন্ত্রী প্রমীলা রানী ব্রহ্ম। শুভময় ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০২:৫৯
Share: Save:

বিজেপি জোট সরকারের আমলেও শুরু হল গন্ডার হত্যা। তাও আবার সদ্য দায়িত্ব নেওয়া বনমন্ত্রীর কাজিরাঙা সফরকালেই ঘটল এই হত্যাকাণ্ড। এই নিয়ে চলতি বছরে কাজিরাঙায় আটটি গন্ডার মারা হল।

নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকে গন্ডার হত্যা হয়নি। ধরা পড়েছে একের পর এক চোরাশিকারি। মারাও পড়েছিল এক শিকারি। গন্ডার সুরক্ষায় প্রধান মুখ্য বনপালের দফতর কাজিরাঙায় স্থানান্তরের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

কিন্তু বনমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রমীলারানি ব্রহ্মর প্রথম সপার্ষদ কাজিরাঙা সফরের প্রথম দিনেই বিপত্তি। গত কাল সন্ধ্যায় কাজিরাঙার কনভেনশন সেন্টারে তখন বনমন্ত্রী এবং আরও দুই পূর্ণমন্ত্রী কেশব মহন্ত ও অতুল বরা, আশপাশের পাঁচ বিধায়ক, বন বিভাগের প্রধান সচিব, গোলাঘাট, কার্বি আংলং, নগাঁও, শোণিতপুর জেলার এসপি, প্রধান মুখ্য বনপাল, মুখ্য বনপাল, কাজিরাঙার উদ্যান অধিকর্তা, ডিএফওদের বৈঠক চলছিল। ঠিক সেই সময়েই শিকারিরা অগরাতলি রেঞ্জে হানা দেয়। ডিমৌ বন শিবিরের কাছে তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শুনে তল্লাশিতে নামে বনরক্ষীরা। পরে রাতে, জাতীয় সড়ক থেকে ৫ কিলোমিটার ভিতরে একটি স্ত্রী গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়। তার খড়্গ কেটে নেওয়া হয়েছিল। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন বনমন্ত্রী রাতেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তাঁর নির্দেশে কাজিরাঙার সব ক’টি প্রবেশ পথ, করিডর, জলপথ বন্ধ করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

গত কাল সকালে স্থানীয় বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে মত বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রমীলারানি বলেছিলেন, ‘‘গন্ডার-হত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনে নতুন আইন আনা হবে। রক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে আরও আধুনিক মারণাস্ত্র।’’ আশপাশের গ্রামবাসীদেরই গন্ডার রক্ষায় উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন তিনি। স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গড়া হবে নতুন যৌথ সুরক্ষাবাহিনী। তাঁদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। আজও সকাল থেকে বনমন্ত্রী অরণ্য ঘেঁষা গ্রামগুলির বাড়ি-বাড়ি ঘুরে বন দফতরের হাত মজবুত করার আহ্বান জানান। এই সব গ্রামের দরিদ্র মানুষই টাকার লোভে শিকারিদের পথ দেখায়, আশ্রয় দেয়, খড়্গ লুকিয়ে রাখে। তাই বনমন্ত্রী তাঁদের জন্য বিশেষ প্রকল্পের আশ্বাস দেন। কাজিরাঙা থেকে অনেক অস্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই করায় ক্ষোভ রয়েছে। সে ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্রহ্ম।

জলসম্পদ মন্ত্রী কেশব মহন্ত জানান, কাজিরঙা উদ্যানের ভিতরে জবরদখল না থাকলেও বুড়াপাহাড়, দেউচুর চাং, বান্দরডুবি এলাকাগুলির চরে জবরদখল রয়েছে। প্রাণীদের চলাচলের রাস্তা থেকে জবরদখল হঠাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার জন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। অগপ সভাপতি তথা কৃষিমন্ত্রী অতুল বরা বন দফতরের হাতে জমা থাকা গন্ডারের খড়্গের হিসেব প্রকাশের জন্য বনমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। আজ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ও যুবক-যুবতীদের সঙ্গেও কাজিরাঙা বাঁচানোর বিষয়ে মত বিনিময় করেন প্রমীলাদেবী।

এর মধ্যেই এই গন্ডার হত্যাকে নিয়েও আগের মতোই রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। বিজেপি-জোট সরকারের মন্ত্রী গন্ডার হত্যায় বিরোধীদের মদত থাকার পরোক্ষ অভিযোগ তোলায় ক্ষিপ্ত কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেন, “গন্ডার হত্যার ঘটনা সব সময়েই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু বনমন্ত্রী যে ভাবে তার পিছনে বিরোধীদের হাত থাকার অভিযোগ তুলেছেন তা খুবই আপত্তিকর।’’ তিনি পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বলেন, ‘‘মন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে আমরাও তা হলে তো ভাবতে পারি, কংগ্রেস সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তখনকার বিরোধীরা গন্ডার শিকার করাচ্ছিল। এই ধরণের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি অবলিম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।” তাঁর কথায়, “ভোটের আগে গন্ডার হত্যা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাঁদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rhinoceros forest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE