Advertisement
E-Paper

চোখ খুলে দেখলেন পরস্ত্রীর পাশে শুয়ে! ক্ষণিকের আনন্দে বেহিসাবি হিসাবরক্ষক, বাঁচালেন স্ত্রী, ধৃত ৫

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৯ জুলাই। হায়দরাবাদের একটি নাম করা গয়নার শোরুমের হিসাবরক্ষক কাজের পরে পানশালায় গিয়েছিলেন গলা ভেজাতে। সেখানে আলাপ এক ‘লাস্যময়ী’র সঙ্গে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৫৯

—প্রতীকী চিত্র।

কাজ শেষ। পানশালায় গিয়েছিলেন আনন্দ করতে। গলা ভেজানোর পরে আরও একটু আনন্দ করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু ক্ষণিকের মজার জন্য ফ্যাসাদে পড়লেন ৪৫ বছরের এক হিসারক্ষক। আর একটু হলেই খুনের দায়ে জেলে যেতেন। বাঁচালেন স্ত্রী! অপহরণ, আঘাত এবং ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে হায়দরাবাদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার মোট ৫ জন।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৯ জুলাই। হায়দরাবাদের একটি নাম করা গয়নার শোরুমের হিসাবরক্ষক কাজের পরে পানশালায় গিয়েছিলেন গলা ভেজাতে। সেখানে আলাপ এক ‘লাস্যময়ী’র সঙ্গে। এ কথা, ও কথা হল। তবে হিসাবরক্ষক যুবতীর মনে দাগ কাটার জন্য নিজেকে গয়নার ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেন। জানালেন, দেশ-বিদেশে তাঁর ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে। কোম্পানির নাম শুনে মুগ্ধ সেই যুবতী। কাজ হল। পানশালা থেকে বেরিয়ে পড়েন দু’জনে। সবে পরিচিত যুবতীকে বাইকে ‘লিফ্‌ট’ দিলেন হিসাবরক্ষক। কুকাটপল্লির পাব থেকে যাচ্ছিলেন বানজারা হিলের দিকে। কিন্তু হঠাৎ একটি এসইউভি রাস্তা আটকে দাঁড়ায় হিসাবরক্ষকের। কিছু বলা নেই, কওয়া নেই, জোর করে দু’জনকে গাড়িতে তুলল তিন-চারটে অচেনা মুখ। তার পর আর কিচ্ছু মনে নেই ৪৫ বছরের যুবকের।

২০ জুলাই সকালে ৬টায় চোখ খুলল হিসাবরক্ষের। তখন তিনি নগ্ন অবস্থায় অচেনা একটি ঘরে শুয়ে। কিন্তু পাশে ইনি কে! চমকে বিছানায় উঠে বসেন হিসাবরক্ষক। শরীরে সুতো নেই, এমন অচেনা এক যুবতীকে দেখে এদিক-ওদিক তাকালেন তিনি। তখন গম্ভীর মুখে এগিয়ে এল কয়েক’টি অচেনা মুখ। যুবকের মুখের সামনে ধরা হল তাঁরই ফোন। তাতে অচেনা যুবতীর সঙ্গে তাঁর একের পর এক নগ্ন ছবি দেখে চোখ কপালে উঠল হিসাবরক্ষকের। ওই অপরিচিতেরা নিজেদের ‘টাস্ক ফোর্স পুলিশ’ বলে দাবি করে হিসাবরক্ষককে জানালেন, তিনি খুন করে ফেলেছেন ওই যুবতীকে!

মানে? বিস্মিত প্রশ্নে আবার কয়েক’টি ছবি দেখানো হল। তখন ঘামছেন ৪৫-এর যুবক। এক জন জানালেন, তাড়াতাড়ি ১০ লক্ষ টাকা দিন। না-হলে কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই সমস্ত ছবিতে ছয়লাপ হবে সমাজমাধ্যম। আর কিছু ভাবতেই পারেননি হিসাবরক্ষক। সব কিছু তখন হিসাবের বাইরে। তিনি রাজি হয়ে গেলেন টাকা দিতে। কিন্তু তার জন্য বাড়ি যেতে হবে। অতএব অটো করে বাড়ি রওনা দিলেন। সঙ্গে ‘টাস্ক ফোর্সের’ এক ‘পুলিশ।’ তাঁকে বাড়ির বাইরে রেখে ভিতরে টাকা আনতে ঢুকলেন যুবক। কিন্তু তিনি যদি না-ফেরেন? ‘পুলিশের’ কাছে জমা রাখতে হল ১০ গ্রাম সোনার হার এবং দামি মোবাইল। অন্য দিকে, বাড়িতে গিয়েও টাকা জোগাড় করতে পারেননি হিসাবরক্ষক।

পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে দেখে পরের চাল দিল সেই ভুয়ো পুলিশের দল। যুবকের ফোন থেকে তাঁর স্ত্রীর হোয়াট্‌সঅ্যাপে পাঠানো হল স্বামীর সঙ্গে এক স্বল্পবসনার ছবি। তার পর সেই নগ্ন ছবি এবং ভিডিয়ো। দাবি, ১০ লক্ষ টাকা না-পাঠালে মহিলাকে খুনের দায়ে জেলে যাবেন স্বামী। কিন্তু জবাব যা এল তার জন্য তৈরি ছিলেন না ভুয়ো পুলিশেরা। হিসাবরক্ষকের স্ত্রী সমস্ত ছবি এবং ভিডিয়ো দেখার পর ‘রিপ্লাই’ করলেন, ‘‘আমার স্বামী যদি খুন করে থাকেন, তা হলে ওঁকে জেলেই ভরে দিন।’’

আর টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দেখে রণেভঙ্গ দিল জালিয়াতির দল। অন্য দিকে, হিসাবরক্ষকের বাড়িতে জোর দাম্পত্য কলহ। কয়েক দিন কাজে যাননি। দিন কয়েক পর কাজে যোগ দিয়ে কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে সব খুলে বললেন তিনি। তাঁরাই জোর করে হিসাবরক্ষককে পাঠিয়েছিলেন থানায়।

অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তাতে ধরা পড়ে একটি প্রতারকের দল। জানা যায়, যে পানশালায় গলা ভেজাতে গিয়েছিলেন হিসাবরক্ষক, সেখানকার একটি দলই ছক কষে খদ্দেরদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা আদায় করে। গ্রেফতার হন ২৭ বছরের এক ‘নটী’ এবং তাঁর স্বামী। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ধরা হয় পানশালার বাউন্সার, ইভেন্ট ম্যানেজার এবং এক ট্র্যাভেল এজেন্টকে। নটীর স্বামী পুলিশকে জানান, তাঁদের প্রচুর টাকার দরকার ছিল। তাই ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই বেহুঁশ হিসাবরক্ষকের পাশে বিবস্ত্র অবস্ত্রায় শুয়ে নাটক করেছিলেন স্ত্রী। তারই ছবি, ভিডিয়ো করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ, জুলুম, ষড়যন্ত্র-সহ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র কয়েক’টি ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

মাথা থেকে বোঝা নেমেছে হিসাবরক্ষকের। কান মুলেছেন, পরস্ত্রীর সঙ্গে ভুলেও আর ‘মজা’ করতে যাবেন না। বাঁচানোর জন্য স্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ছেন। কিন্তু দাম্পত্য কলহ চলছেই।

Extortion arrest hyderabad Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy