প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে নিয়ে রক্তচাপ ক্রমশই বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যতই রাষ্ট্রপতি পদের ‘গাজর’ ঝোলানো হোক, আডবাণীকে এখনও বাগে আনতে পারেননি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে সংসদের অচলাবস্থা প্রসঙ্গে সংসদীয় মন্ত্রীর অপারগতায় ‘ফোঁস’ করেছিলেন তিনি। আর আজ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার এক দিন আগে আডবাণী সুকৌশলে পদত্যাগ করার অভিপ্রায় ছড়িয়ে দিয়েছেন রাজনীতিকদের মধ্যে। তাঁর এই উষ্মার সুযোগ নিতে ছাড়েনি কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘আপনার দলে গণতান্ত্রিক মূল্য রক্ষার জন্য যে লড়াই আপনি করছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আডবাণীজি।’’ সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘আডবাণীজির উচিত মার্গদর্শক মণ্ডলী থেকে পদত্যাগ করা। কারণ এটা স্পষ্ট যে তাঁর প্রদর্শিত রাস্তায় হাঁটছে না এই বিজেপি!’’ গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা।
ঘটনার সূত্রপাত আজ লোকসভা মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পর। সবাই এক এক করে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও নিজের আসনে বসেছিলেন এই প্রবীণ নেতা। আডবাণী উঠছেন না দেখে তাঁর পাশে গিয়ে বসেন বিজেপি-র দুই মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও মনোজ সিন্হা। বিজেপি সূত্রের মতে, তাঁরা চাননি বিরোধী সাংসদদের আডবাণী কিছু বলে বসুন। কিন্তু তাঁরা উঠে যাওয়ার পরেও আসন ত্যাগ করেননি আডবাণী। উপস্থিত বিজেপি সাংসদ নানাভাউ পাটোলে ও স্মৃতি ইরানির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমন সময়ে বিরোধী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলি।
পরে এই তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, ‘‘আডবাণীজির কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর শরীর কেমন আছে। জবাবে বললেন, তাঁর শরীর তো ঠিকই আছে। কিন্তু সংসদের স্বাস্থ্য ভাল নয়!’’ সূত্রের খবর, আডবাণী সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন বলেও তিন জন সাংসদকে জানিয়েছেন।
ঘটনাচক্রে প্রথম যে দিন সংসদ না চলা নিয়ে আডবাণী ক্ষোভ প্রকাশ
করেছিলেন সে দিনও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল ইদ্রিসের। সে দিন বিরোধীরা সংসদে বিক্ষোভ দেখান। আডবাণীর সামনেই গোলমাল করছিলেন ইদ্রিস। তাঁর বিক্ষোভেই আডবাণী আরও বিরক্ত হয়েছেন বলে ইদ্রিসকে জানান কয়েক জন বিজেপি সাংসদ। তাই পরে আডবাণীর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন ইদ্রিস।
রাজনীতিকদের মতে, আডবাণী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এতটাই কৌশলে বার্তা দিচ্ছেন যে দল-বিরোধিতার কোনও তকমা তাঁকে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলছেন না। সংসদ কক্ষে বসে নিজের ‘মনের কথা’ সতীর্থ সাংসদদের সঙ্গে বলছেন মাত্র। কিন্তু সেই ‘কথার’ জের সংসদের ঘেরাটোপ পেরিয়ে নোট-নাকচ নিয়ে ব্যাকফুটে থাকা মোদীকে চাপে ফেলছে। যেমন আজ তাঁর ‘মন কি বাত’ নিয়ে বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিরোধী নেতারা।
আজ শুধু নিজের পদত্যাগের কথাই বলেননি প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন অটলবিহারী বাজপেয়ীরও। তাঁর সঙ্গে যে বিরোধী সাংসদদের কথা হয়েছে তাঁদের দাবি, বাজপেয়ী যদি আজ সংসদে উপস্থিত থাকতেন তাহলে তাঁরও দুঃখ হত বলে মন্তব্য করেছেন আডবাণী। ওই প্রবীণ বিজেপি নেতার মতে, সংসদ চালানোটা মূলত সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আলোচনা-বিতর্কের পরিবর্তে যদি ঝগড়ার জেরে সংসদ মুলতবি হয় তাহলে গোটা বিশ্বের কাছেই খারাপ বার্তা যাবে। বস্তুত এ দিনই অন্য এক অনুষ্ঠানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, ‘‘স্কুলের পড়ুয়ারা সংসদের কাজকর্ম দেখতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার পাঠ নিয়ে ফিরছে।’’ বিরোধীদের দাবি, এই বিশৃঙ্খল অবস্থার মীমাংসা করার দায় যে সরকারের সেটাই বার বার বোঝাতে চেয়েছেন আডবাণী।
আডবাণীর এই কৌশলে বিপাকে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘এমনিতেই বিরোধী দলের প্রচারের ঠেলা সামলাতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। আডবাণীজির কথায় বিরোধীরা বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy