কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যুদ্ধসরঞ্জাম দিতে কেন দেরি করে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। তাঁর বক্তব্য, চুক্তিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ওই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তুলে দিতে পারে না সংস্থাগুলি। যে প্রতিশ্রুতি পূরণই করা যাবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অর্থ কী? সেই প্রশ্নও তোলেন বায়ুসেনা প্রধান।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল সিংহ। বণিকসভার ওই অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও উপস্থিত ছিলেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের সাফল্য এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার কথা বর্ণনার পাশাপাশি এই সমস্যার দিকটিও তুলে ধরেন তিনি। বায়ুসেনা প্রধান বলেন, “সময়সীমা একটি বড় সমস্যা। আমার মনে হয়, এমন একটিও প্রকল্প নেই, যেটি সময়মতো সম্পন্ন হয়েছে। এই বিষয়টির উপর আমাদের নজর দিতে হবে। এমন কোনও প্রতিশ্রুতি আমরা কেন দেব, যা পূরণ করা সম্ভব নয়? চুক্তি স্বাক্ষর করার সময়, কখনও কখনও আমরা নিশ্চিতই থাকি যে এটি (সময়মতো) পাওয়া যাবে না। তা-ও আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করি।”
বর্তমানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা অনেকটা কমিয়ে এনেছে ভারত। ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি করা হচ্ছে। মূলত দেশীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বায়ুসেনা প্রধান। উদাহরণ হিসাবে তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহে দেরি হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। বস্তুত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর সঙ্গে ৪৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল সরকারের। চুক্তি অনুসারে ৮৩টি যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ওই সংস্থার। প্রাথমিক ভাবে ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিমানগুলি সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত একটিও সরবরাহ হয়নি।
আরও পড়ুন:
বণিকসভার অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশি নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসার বিষয়েও আলোকপাত করেন বায়ুসেনা প্রধান। তবে এ ক্ষেত্রে বাহিনী এবং যুদ্ধসরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থাগুলির মধ্যে পারস্পরিক ভরসাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। বায়ুসেনা প্রধান বলেন, “শুধুমাত্র ভারতে তৈরি হওয়ার কথা বললেই হবে না, আমাদের নিজস্ব একটি কাঠামো তৈরি নিয়েও কথা বলা প্রয়োজন। আমাদের বাহিনী এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আস্থা থাকা দরকার। এ বিষয়ে আমাদের আরও খোলামেলা হতে হবে। একবার কোনও কিছুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিলে, সেটি পূরণ করা উচিত।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের কথাও বণিকসভার বক্তৃতায় তুলে ধরেন বায়ুসেনা প্রধান। এই অভিযানকে একটি ‘জাতীয় জয়’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। তাঁর কথায়, হয়তো ঈশ্বরও ভারতের সঙ্গে ছিলেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের জন্য প্রত্যেক ভারতীয়কে ধন্যবাদ জানান এয়ার চিফ মার্শাল।