বরাতের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষ থেকেই ধাপে ধাপে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হওয়ার প্রায় দু’বছর পরে শেষ পর্যন্ত প্রথম দফায় মাত্র দু’টি ‘তেজস মার্ক-১এ’ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে চলেছে নির্মাতা সংস্থা ‘হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড’(হ্যাল)।
হ্যালের বেঙ্গালুরুর সদর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ১০টি যুদ্ধবিমান নির্মাণের কাজ শেষ। প্রথম দফায় তার মধ্যে দু’টিকে বায়ুসেনার হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হবে আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। প্রসঙ্গত, বরাত দেওয়ার পরেও হ্যাল সময়মতো তেজস সরবরাহ না করায় চলতি বছরের গোড়ায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ স্বয়ং।
ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা ওজনের, ‘মাল্টি রোল সুপারসনিক’ যুদ্ধবিমান তেজস নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম। এর ৬৫ শতাংশেরও বেশি যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম ভারতীয় সংস্থাগুলি তৈরি। চিনের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের তুলনায় তেজসের নয়া সংস্করণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হ্যালকে ৪০টি তেজস মার্ক-১ বরাত দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। পরে ৮৩টি তেজস কেনার জন্য হ্যালকে বরাত দেওয়া হয়েছে। তেজসের নৌ সংস্করণ ব্যবহার করতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনাও।
২০২৩ সলের অক্টোবরে তেজসের মার্ক-১ ফাইটার জেটের দু’আসন বিশিষ্ট নয়া প্রশিক্ষণ সংস্করণটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হয়েছিল বায়ুসেনার হাতে। কিন্তু প্রথম বরাতের ৪০টি যুদ্ধবিমানের সব ক’টি এখনও পাওয়া যায়নি। পাঁচ দশকের পুরনো রুশ মিগ-২১-এর বদলে আগামী পাঁচ বছরে ১০০-রও বেশি তেজস চায় বায়ুসেনা। এর নতুন সংস্করণ তেজস মার্ক-২-কে ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যান্ড অ্যারো রেডার’ (এএসইএ), মিড এয়ার ফুয়েলিং এবং ‘অস্ত্র’ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত করার কাজও সম্পূর্ণ করে ফেলেছে হ্যাল। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্যে সফল উড়ান এবং অবতরণ পরীক্ষাও হয়েছে তেজসের। কিন্তু বিমানগুলি শেষ পর্যন্ত কবে হাতে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
গত জুন মাসে হ্যালের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডিকে সুনীল তেজস সরবরাহে বিলম্বের জন্য আমেরিকার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। তিনি জানান, ওই যুদ্ধবিমানের এফ৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থা ‘জিই অ্যারোস্পেস’-এর দেরির কারণেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমানগুলি পৌঁছে দিতে দেরি হচ্ছে তাঁদের। এ জন্য জিই অ্যারোস্পেসকেই দায়ী করেছিলেন সুনীল। হ্যাল-প্রধান বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বিমান তৈরি রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ছ’টি বিমান রয়েছে। কিন্তু এখনও মার্কিন সংস্থা থেকে ইঞ্জিন সরবরাহ করা হয়নি। ২০২৩ সালে তাদের ইঞ্জিন পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত আমাদের কাছে মাত্র একটি ইঞ্জিন এসে পৌঁছেছে।’’