Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সমীক্ষায় ‘মুখ’ বরুণ, তবু দ্বিধায় অমিত

সামনে ফের বড় লড়াই। উত্তরপ্রদেশ। অসমের মতো এ রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কোনও একটি মুখকে তুলে ধরার প্রবল চাপ রয়েছে দলে। সেই মুখ বাছতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিলেন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

সামনে ফের বড় লড়াই। উত্তরপ্রদেশ। অসমের মতো এ রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কোনও একটি মুখকে তুলে ধরার প্রবল চাপ রয়েছে দলে। সেই মুখ বাছতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিলেন। সমীক্ষার ফল বেরোতে যারপরনাই বিস্মিত তাঁরা! কারণ সমীক্ষা বলছে, উত্তরপ্রদেশের সিংহভাগ এলাকায় অন্য সকলকে টেক্কা দিয়ে জনপ্রিয়তার দৌড়ে যিনি এগিয়ে রয়েছেন, তিনি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি নন। কট্টর হিন্দুত্বের বিতর্কিত মুখ যোগী আদিত্যনাথও নন।

তিনি বরুণ গাঁধী! বিশেষত উত্তরপ্রদেশের অল্পবয়সি ভোটারদের মধ্যে গাঁধী পরিবারের তরুণ মুখ এখন বড় আকর্ষণ বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা।

আর তাতেই কিছুটা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন অমিত। অন্য কোনও নাম এলে হয়তো এত ভাবার দরকার ছিল না। অথচ বরুণ ভাল বক্তা। দাদা রাহুলের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ের চমকটাও দুর্দান্ত হতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে রাজি হোন বা না-হোন, ভোটযুদ্ধে রাহুলই কংগ্রেসের ‘ক্যাপ্টেন’। কাজেই বিজেপির মোক্ষম তাস হতে পারতেন বরুণ।

কিন্তু গণ্ডগোল। বিস্তর গণ্ডগোল। সঞ্জয়-পুত্রকে নিয়ে আগেই তো হাত পুড়িয়ে বসে রয়েছে বিজেপি! নেতাদের একাংশের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশে গত ভোটগুলিতে বরুণকে যা যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই তিনি পালন করেননি। লোকসভা ভোটে বরুণের জন্য প্রচার কর্মসূচি তৈরি হয়েছিল। হেলিকপ্টার ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু কথা দিয়েও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন তরুণ নেতা।

শুধু তা-ই নয়, প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকেও বিপাকে ফেলেছেন বরুণ। এক বার মোদীর সভায় লোক কম হওয়ায় দলে তিনি তোপের মুখে পড়েছিলেন। বরুণের মা তথা মোদী সরকারের মন্ত্রী মেনকা এক বার বলেছিলেন, ‘‘বরুণকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিলেই রাজ্যের হাল ফিরবে।’’ দলের তরফে অস্বস্তি ঢাকতে মেনকাকে এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। যদিও এখনও দলে বরুণের ঘনিষ্ঠরা (বিশেষত উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রসঙ্গে) বলে চলেছেন, যতক্ষণ না পাকাপাকি ভাবে বরুণকে দলের মুখ করা হচ্ছে এবং সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ তিনি স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন না। বিজেপির এক নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘বরুণের সমস্যা হল, তিনি গাঁধী পরিবারের মতোই আচরণ করেন। দল কী চাইছে, তার পরোয়া না করে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চান। বিজেপির মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ দলে সেটা সম্ভব নয়।’’

তা ছাড়া, এ যাবৎ যে যে রাজ্যের দায়িত্ব বরুণকে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি। রাজ্য নেতৃত্বও খুশি নন তাঁর উপরে। সেই কারণেও অনেকের মত, বরুণকে সামনে রেখে অমিত উত্তরপ্রদেশের ভোট লড়বেন না। তাঁদের ব্যাখ্যা, সভাপতি হওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অমিত যে বরুণকে বাদ দিয়েছিলেন, সেটা তাঁকে আরও ‘পরিণত’ হওয়ার বার্তা দিতেই। দ্বিতীয় বার সভাপতি হয়ে অমিত এখনও নতুন টিম তৈরি করেননি ঠিকই। কিন্তু তাঁর বর্তমান টিমেও তো বরুণ নেই!

অথচ এই বরুণকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি তুলে ইতিমধ্যেই পোস্টার পড়েছে উত্তরপ্রদেশের নানা জায়গায়। তা-ও স্মৃতি ইরানির সঙ্গে তুলনা টেনে! পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘স্মৃতি ইরানি হুই বিমার / উত্তরপ্রদেশ কি ইয়ে হি পুকার / বরুণ গাঁধী আব কি বার’। প্রচারকর্তার দেখা মেলেনি। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা ভাল চোখে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মাঝে স্মৃতির নাম যখন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভেসে উঠেছিল, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ্যে তা খণ্ডন করে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলে এ ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয় না।’’ অথচ পোস্টার নিয়ে বরুণ চুপ।

প্রয়াত প্রমোদ মহাজন বরুণকে বিজেপিতে এনেইছিলেন রাহুলকে টক্কর দেবেন বলে। দলের খবর, বরুণ প্রথমেই নেতাদের স্পষ্ট করে দেন, তিনি কোনও ভাবেই গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ করবেন না। সনিয়া, রাহুল, বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট সুসম্পর্ক। তা-ও বিজেপির মাথাব্যথা।

কাজেই সমীক্ষার জোরেও উত্তরপ্রদেশে ‘অ্যাডভান্টেজ বরুণ’ বলা এখনও অসম্ভব। দলের অনেকেই বলছেন, বরুণকে নিয়ে অমিতের আস্থার ঘাটতি সাত-তাড়াতাড়ি মিটে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে বিজেপি সভাপতির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এখনও কিছু স্থির হয়নি। প্রতিটি রাজ্যের সমীকরণ আলাদা। অসমে এই পথে সাফল্য এসেছে। আবার কাউকে মুখ না করেও অন্য রাজ্যে সফল হয়েছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah CM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE