তখনও দুই বাড়ির বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। সাজ সাজ রব রাজা রঘুবংশী এবং সোনম রঘুবংশীর পরিবারের। ওই সময়ের মধ্যে এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে টানা কথাবার্তা বলতেন সোনম। না, তিনি সোনমের প্রেমিক তথা বাবার অফিসের কর্মী রাজ কুশওয়াহা নন। তাঁর নাম সঞ্জয় বর্মা। মেঘালয়ে ইনদওরের ব্যবসায়ী রাজার খুনে নতুন চরিত্রের সন্ধান পেল পুলিশ। কে তিনি? কী সম্পর্ক ছিল সোনমের সঙ্গে? রাজার খুনের সঙ্গে কি তাঁর কোনও যোগসূত্র রয়েছে? তদন্তে মেঘালয় পুলিশ।
রাজার খুনে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচ জন। ধৃতদের মধ্যে আছেন রাজার নববধূ সোনম, সোনমের প্রেমিক রাজ এবং তিন ভাড়াটে খুনি। তাঁদের মোবাইল ঘেঁটে নানা তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি তথ্য খুনের মামলার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে নতুন নাম। সোনমের ফোন ঘেঁটে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) জানতে পেরেছে সঞ্জয় নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রায়শই কথাবার্তা বলতেন ২৪ বছরের যুবতী। ‘কল ডেটা রেকর্ড’ দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত মোট ১১৯ বার ফোনে কথোপকথন হয়েছে সোনম এবং জনৈক ব্যক্তির। তবে সঞ্জয় নামে ওই ব্যক্তির মোবাইল এখন বন্ধ!
উল্লেখ্য, এমবিএ ডিগ্রিধারী সোনমের সঙ্গে ব্যবসায়ী রাজার বিয়ে হয় গত ১১ মে। সপ্তাহখানেক পরে ইনদওরের নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমায় যান মেঘালয়ে। ২১ মে তাঁরা ওঠেন শিলঙের বালাজি গেস্ট হাউসে। পরের দিন ভাড়া করা স্কুটি নিয়ে শিলং থেকে সোহরা বেড়াতে যান নবদম্পতি। তার পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁদের। তদন্তে উঠে এসেছে, গত ২৩ মে রাজা এবং সোনমকে অনেকে দেখেছেন। ২৪ মে সোহরারিমে তাঁদের ভাড়া করা স্কুটিটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
কয়েক দিন ধরে তল্লাশির পর নিখোঁজ রাজার নিথর দেহ মেলে ওয়েই সাওডং জলপ্রপাতের কাছে একটি ঝোপের ধারে। সেটা ২ জুন। ঘটনাক্রমে এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদ থেকে গ্রেফতার হন রাজার স্ত্রী সোনম। পরে সোনমের প্রেমিক এবং তিন ভাড়াটে খুনি। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, দু’টি দা দিয়ে কোপানো হয়েছিল রাজাকে। প্রথম আঘাতটি করেন বিশাল সিংহ চৌহান নামে তিন ভাড়াটে খুনির এক জন। রাজা যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, মুখ ফিরিয়ে কিছুটা দূরে চলে যান স্ত্রী সোনম। স্বামীর খুনের পরে তিনি আবার অকুস্থলে যান এবং তাঁর দেহ সরানোর কাজে হাত লাগান। এ-ও জানা যাচ্ছে, খুনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল নির্জন ওয়েই সাওডং জলপ্রপাত এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের থাকার আশঙ্কা নেই বুঝেই পরিকল্পনা হয়। খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণে মঙ্গলবার ধৃত পাঁচ জনকে নিয়েই ওই স্থানে গিয়েছিল মেঘালয় পুলিশ। সেখানে খুনে ব্যবহৃত দ্বিতীয় দা-টি উদ্ধার হয়েছে। একটি সাদা রঙের জামা পাওয়া গিয়েছে ঝোপ থেকে। জানা গিয়েছে, ওই জামাটি ধৃত আকাশ রাজপুত রাজাকে খুনের দিন পরেছিলেন। এখন সঞ্জয়ের রহস্যভেদের চেষ্টায় পুলিশ।