লাদাখ নিয়ে চিনের নয়া কৌশল।
বাগ্যুদ্ধ এবং শান্তি আলোচনা একই সঙ্গে চলছে ভারত ও চিনের মধ্যে। গত কাল ভারত-চিন সামরিক আলোচনার পরে যৌথ উদ্যোগে সীমান্তে শান্তি ফেরানোর বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। আবার একই সময়ে বেজিং রক্তচক্ষু দেখিয়ে বলেছে, লাদাখ বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে ভারত! চিন তাকে ভারতীয় অঞ্চল বলেই মানে না।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সমস্তটাই চিনের তরফে সময় নষ্ট করার কৌশল। আশঙ্কা হল, যত সময় কাটবে, ততই ভারতের ভূখণ্ডে নিজেদের বুটের দাগ পাকা করবে লালফৌজ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অদৃশ্য রেখার বদল ঘটিয়ে তারা আরও এগিয়ে আসবে ভারতের দিকে। টহলদারির অধিকার হারিয়ে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য হবে ভারতীয় সেনা। তৈরি হবে সিয়াচেনের মতো পাকাপাকি একটি সংঘর্ষবিন্দু।
গত কাল সপ্তম রাউন্ডের সামরিক স্তরে আলোচনা কার্যত কোনও সমাধানসূত্রের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন ভূখণ্ড থেকে চিনের পিছু হটার ব্যাপারে কোনও পাকা কথা আদায় হয়নি। গত কালের আলোচনার পরে যে যৌথ বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে, তাতে সঙ্কটমোচনের কোনও দিশা নেই। বরং গত তিন মাসের বিবৃতির পুনরাবৃত্তি রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মতপার্থক্য যাতে সংঘাতে পরিণত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে চান দু’দেশের নেতৃত্বই। সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখতে দু’দেশ যৌথ ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’’
অথচ এর পরেই আজ চিনের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তোপ দেগে দাবি করা হয়েছে, ভারতই নষ্টের গোড়া। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতই সেনা মোতায়েন করে এবং পরিকাঠামো তৈরি করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বেজিং-এর বক্তব্য, লাদাখকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে মানে না চিন। ভারত বেআইনি ভাবে এলাকাটা দখল করে রেখেছে।
সামরিক-কূটনৈতিক স্তরে জট ছাড়ানোর আলোচনা চলার সময় চিনা বিদেশ মন্ত্রক থেকে এই ধরনের আক্রমণাত্মক মন্তব্য, পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলবে বলে আশঙ্কা সাউথ ব্লকের। তবে আজ চিনের এই অতি আক্রমণাত্মক ভূমিকার জন্য গত কাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মন্তব্য এবং পদক্ষেপও দায়ী বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।
গত কাল রাজনাথ সিংহ চিন সীমান্তে ৪৪টি সেতুর উদ্বোধন করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান এবং চিন যৌথ ভাবে সীমান্তে সঙ্কট তৈরি করার চেষ্টা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর দৃশ্যতই ফুঁসে উঠেছে বেজিং। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেছেন, “আমি প্রথমেই এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই, লাদাখকে ভারত বেআইনি ভাবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রেখেছে। আমরা এটা মানি না। একই ভাবে অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের রাজ্য বলে মানি না। সীমান্তে ভারতের সামরিক সমাবেশ এবং পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টার বিরোধিতা করছি আমরা।’’
চিনের এই তীব্র মন্তব্যের কোনও জবাব এখনও পর্যন্ত দেয়নি সাউথ ব্লক। বিষয়টিকে রাজনাথ সিংহের মন্তব্যের জবাব হিসেবেই দেখে উত্তেজনা আপাতত প্রশমিত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বিষয়টি যথেষ্ট জটিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy