গত বছর অগস্টে বাংলাদেশে অশান্তির পরে নানা ভাবে মুখ পুড়েছিল নয়াদিল্লির। সে দেশে ভারত-বিরোধিতার মূল ভরকেন্দ্র ছিল ভারতের বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি প্রকাশ্য পক্ষপাত এবং তাঁকে আশ্রয় দেওয়া। কিন্তু নেপালে পালাবদলে ভারত কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজতন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে থাকার নীতি নিচ্ছে না। বরং তাদের থেকে নিজেদের বিযুক্ত করে নেপালবাসীর পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে সাউথ ব্লক।
নয়াদিল্লির অনুমান, কোনও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কথা বললে সে দেশের বিক্ষোভকারী অংশ এবং সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। আর সে কারণেই নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে দেশের বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নামও উচ্চারণ করেননি। বরং বলেছেন, “নেপালের স্থিতিশীলতা, উন্নতি এবং শান্তিরক্ষা ভারতের প্রাথমিক গুরুত্ব। আমার নেপালি ভাই-বোনেদের কাছে আবেদন, আপনারা শান্তির পক্ষে থাকুন।” যে ভাবে তরুণ প্রাণ চলে গিয়েছে, তাতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওলি। তাঁর বক্তব্য, দিল্লির বিরুদ্ধাচরণ করার ফলেই তাঁকে গদি ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানে নেপাল সেনার শিবপুরি ব্যারাকে রয়েছেন ওলি। সেখান থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদককে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি নাকি অভিযোগ করেছেন, “আমি যদি লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন না তুলতাম, তা হলে এখনও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।” বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই চিঠির অংশবিশেষ বেরোলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি বিদেশ মন্ত্রক। তবে ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে, যদি ওলি এমন সত্যিই বলে থাকেন, তা হলে প্রকারান্তরে ভারতের সুবিধাই হবে। এই মুহূর্তে সে দেশের আবেগ সম্পূর্ণ ভাবে ওলি এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে। ফলে তিনি সত্যিই ভারত-বিরোধিতার তাস খেলতে চাইলে তা কাজে আসবে না, বরং এই বার্তা যাবে তাঁর কুশাসনে নয়াদিল্লির মদত ছিল না। তবে নেপালের অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও কথাবার্তা শুরু করে না করে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে চাইছে সাউথ ব্লক।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এটা প্রথম থেকেই স্পষ্ট যে ওলি চিনের হাতে তামাক খেতে কুর্সিতে বসেছেন। ২০১৫ সালে তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, সে সময় মদেশীয় বিক্ষোভের জেরে ভারত পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কে পি ওলির হাতেও সুযোগ এসে যায়, তিনি তখন অতি-জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া দিতে শুরু করেন। একই সঙ্গে, তিনি চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেন, যাতে ভারতের উপর নির্ভরতা কমে। এরপর ভারত আর্থিক অবরোধ তুলে নিলেও ওলির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। নেপালে কোনও প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর ভারতে আসেন, এটাই রেওয়াজ। কিন্তু সেই প্রথা ভেঙে ২০২৪-এ ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ওলি প্রথম বিদেশসফরে চিনে যান, ভারতে নয়। অবশ্য এই মাসের শেষে তাঁর ভারতে আসারই কথা ছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)