Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
‘পিএম-কেয়ারস কোয়রান্টিনে!’
India Lockdown

মধ্যপ্রদেশে মৃত্যু ঘরমুখো আরও পাঁচ শ্রমিকের

কংগ্রেসের বক্তব্য, ৮ মে পর্যন্ত হিসেব বলছে, ঘরে ফিরতে চাওয়া ৪২ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন পথে। এর জন্য কে দায়ী?

দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদন
নরসিংহপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

বাড়ি ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল চলছেই। এ বার মধ্যপ্রদেশে আম-বোঝাই ট্রাক উল্টে মারা গেলেন আরও পাঁচ জন ভিন‌্ রাজ্যের শ্রমিক।

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তি ও অনাহারে মারা পড়ছেন কেউ কেউ। দুর্ঘটনারও বলি হচ্ছেন অনেকে। দু’দিন আগেই পথশ্রমে ক্লান্ত শ্রমিকদের একটি দল ঘুমিয়ে পড়েছিলেন রেললাইনে। মালগাড়ির চাকা পিষে দিয়েছে তাঁদের ১৬ জনকে। মহারাষ্ট্রের ওই ঘটনার পরে ফের শ্রমিকদের মৃত্যু হল মধ্যপ্রদেশে। জখম হয়েছেন ১৫ জন। ভিন‌্ রাজ্যের শ্রমিকদের চরম দুর্দশা ও পরের পর মৃত্যু দেখেও কেন্দ্র কেন নিষ্ক্রিয়— তা নিয়ে আজ ফের সরব হয় কংগ্রেস ও সিপিএম। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খরচ না-করে পিএম-কেয়ারসের টাকা কেন ‘কোয়রান্টিনে’ রাখা হয়েছে, আজ এই প্রশ্নও তুলেছে কংগ্রেস।

পশ্চিম ও মধ্য রেল আজ আবেদন জানিয়েছে, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা কেউ রেললাইন ধরে হাঁটবেন না বা লাইনে শুয়ে পড়বেন না। বাড়ি ফিরতে চাইলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শ্রমিক ট্রেনের বন্দোবস্ত করা হবে। ঘটনা হল, সড়ক পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। লকডাউনে ট্রেন চলছে না। এই সব ভাবনা থেকেই মহারাষ্ট্রের জলনা থেকে মধ্যপ্রদেশের ভুসাবলে যাওয়ার পথে লাইন ধরে হেঁটেছিলেন শ্রমিকেরা। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন লাইনেই।

আরও পড়ুন: আজ মোদীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা ॥ টিকিট আজই, কাল চালু রেল

মধ্যপ্রদেশে দুর্ঘটনায় পড়া ট্রাকটি আসছিল হায়দরাবাদ থেকে। গন্তব্য ছিল, ঝাঁসি ও উত্তরপ্রদেশের আগরা। ট্রাক-বোঝাই আমের উপরে বসে ছিলেন শ্রমিকেরা। গাড়িতে ছিলেন দু’জন চালক ও এক জন খালাসিও। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ভোপাল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকটি উল্টে যায়। নরসিংহপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে, মুঙ্গওয়ানিতে। সম্ভবত গতি বেশি হওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের এক জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাই বাকিদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই ঘটনায় শোক জানিয়ে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজসিংহ চৌহান বলেছেন, “প্রার্থনা করি আহতেরা দ্রুত সেরে উঠুন। শোক সামলে ওঠার শক্তি পান স্বজনহারারা।” দিল্লি থেকে সাইকেল চালিয়ে বিহারের পূর্ব চম্পারণের বাড়িতে ফেরার পথে শনিবার গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন সাগির আনসারি নামে এক পরিযায়ী শ্রমিক।

আরও পড়ুন: এ দিকে ফেরার ট্রেন, ও দিকে থমকে সুযোগ

কংগ্রেসের বক্তব্য, ৮ মে পর্যন্ত হিসেব বলছে, ঘরে ফিরতে চাওয়া ৪২ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন পথে। এর জন্য কে দায়ী? কেন কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ীদের দুর্দশা ঘোচাতে কিছু করছে না? পিএম-কেয়ারস তহবিলের ক’টাকা এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে? কেন এই তহবিলের টাকা ‘কোয়রান্টিনে’ রেখে দেওয়া হয়েছে? নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রিয়া শ্রিনেত অভিযোগ করেন, গত ১ মার্চ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘোষণা করেছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। কিন্ত কাজ খোয়ানো মানুষগুলির কাছ থেকেও ভাড়া নিয়েছে এই নির্মম সরকার। কর্নাটকের বিজেপি সরকারের টালবাহানার কারণে মানুষ হেঁটে বাড়ি পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। সুরত থেকে ফেরার ট্রেন না-পেয়ে এক এক জন শ্রমিক বাসের জন্য ৪০০০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের ছত্তরপুর সীমানায় ৫০০০ মানুষ আটকে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ সরকার ঢুকতে দিচ্ছে না। ওখানে না-খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন ৪ জন। কংগ্রেস পরিযায়ীদের ফেরাতে সাহায্য জোগাবে বলে ঘোষণা করেছেন দলনেত্রী সনিয়া গাঁধী। বিজেপি ও রেল মন্ত্রক তা নিয়েও রাজনীতি করছে।

সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “কেন্দ্র গত ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, পথে কোনও পরিযায়ী শ্রমিক নেই। কিন্তু অজস্র খবর আসছে পথে তাঁদের দুর্দশা নিয়ে। এতেই স্পষ্ট, কেন্দ্রের ওই দাবি কতটা সত্য। শীর্ষ আদালতকে বিপথচালিত করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক, কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি এই উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য।” ইয়েচুরির দাবি, কোনও রকম সাহায্য না-জুগিয়ে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়ার জন্য জবাবদিহি করতে হবে সরকারকে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE