E-Paper

সন্ত্রাস, মধ্যস্থতা নিয়ে বিশ্বকে বলবে ভারত

ঘটনা হল ট্রাম্পের ধারাবাহিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও সরকারি বিবৃতি এখনও পর্যন্ত দেয়নি ভারত। কিন্তু মিস্রী তাঁর বক্তব্যে সফরোদ্যত সমস্ত সাংসদকে বলেছেন, বিদেশের মাটিতে গিয়ে এ কথা স্পষ্ট করতে যে ভারত পাকস্তান দ্বিপাক্ষিক ভাবেই যা করার করেছে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ০৭:১৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কোনও রাষ্ট্র (আমেরিকা) মধ্যস্থতা করায়নি। ভারতীয় সেনার শৌর্যে পরাস্ত হয়ে পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করে সংঘাত বিরতি চেয়েছিলেন, সব দিক বিবেচনা করে তাতে সাড়া নিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে, তারা নির্মূল করেছে পাক মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। কিন্তু পাকিস্তান সরকার জঙ্গিদের হয়ে বদলা নিতে ভারতের উপর হামলা করলে তার প্রত্যাঘাত করা হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে সবার অবগতহওয়া প্রয়োজন।

এই নির্দিষ্ট ভাষ্যটিকে সামনে রেখে আগামিকাল থেকে সর্বদলীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলগুলি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আজ সংসদে ওই দলগুলির সঙ্গে বৈঠকে এই ভাষ্যটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। উদ্দেশ্য, বিভিন্ন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে যেন সবাই এক সুরে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সরব হন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘাত যে মাত্রায় পৌঁছেছিল, তাতে বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি পড়বে এমনটাই স্বাভাবিক ছিল এবং সেটাই ঘটেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনিই মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ থামিয়েছেন। যুদ্ধ থামানোর জন্য ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সওদা করেছেন বলেও তাঁর দাবি।

ঘটনা হল ট্রাম্পের ধারাবাহিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও সরকারি বিবৃতি এখনও পর্যন্ত দেয়নি ভারত। কিন্তু আজ মিস্রী তাঁর বক্তব্যে সফরোদ্যত সমস্ত সাংসদকে বলেছেন, বিদেশের মাটিতে গিয়ে এ কথা স্পষ্ট করতে যে ভারত পাকস্তান দ্বিপাক্ষিক ভাবেই যা করার করেছে। কোনও অন্য রাষ্ট্রের সহায়তায় নয়।

ঘটনা হল, অন্য সব দেশের পাশাপাশি, আমেরিকায় যাচ্ছে শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ রয়েছেন অন্য একটি প্রতিনিধি দলে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আমেরিকায় গিয়ে খোদ আমেরিকাকেই কী ভাবে বোঝাবেন যে তাদের মধ্যস্থতা ছিল না? রসিকতা করেই খুরশিদ বলেন, “ওই জন্যই তো আমি আমেরিকা যাচ্ছি না! শশী তারুর যাচ্ছেন। তিনি যা বোঝানোর বোঝাবেন।”

তবে এই নিয়ে কোনও স্পষ্ট দিশা নির্দেশ এখনও সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। আজ রাতে সফরকারী সব সদস্যদের ‘ডশিয়ার’ দেওয়া হয়েছে। সেখানে যিনি যে দেশে যাবেন, সেখানে গিয়ে কী কী বলবেন সেগুলি বলে দেওয়া রয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। মিস্রী জানিয়েছেন, সাংসদরা বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সদস্য-সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলে ধরাটা থাকবেপ্রধান লক্ষ্য।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সফরের জন্য যে ভাবে দেশগুলিকে সাজিয়েছে মোদী সরকার, তার মধ্যে রয়েছে একটি সচেতন কূটনৈতিক কৌশল। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এবং বর্তমান অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে পৌঁছনো তো হবেই। পাশাপাশি, আগামী বছরে যারা নতুন সদস্যপদ পেতে চলেছে সেই দেশগুলিতেও যাওয়া হবে। যাতে আগামী দিনেও পরিষদে পাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে পারে। লাটভিয়া, কঙ্গো, বাহরিন, লাইবেরিয়া এবং কলম্বিয়া আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দু’বছরের জন্য পরিষদের অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মনোনীত হচ্ছে। ভারতের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদল যাচ্ছে এই দেশগুলিতে। মনে করা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো এবং জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের ভুমিকা সম্পর্কে এই দেশের নেতারা যদি অবহিত থাকেন, তা হলে নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের (২০২৬-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিষদের অস্থায়ী সদস্য) তর্কগুলিতে সাড়া দেওয়া বা বোঝা তাদের পক্ষে সুবিধা হবে।

জি-৫ গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিনিধি দল যাচ্ছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে চিনকে। আগামী ডিসেম্বরে যে সব রাষ্ট্রের মেয়াদ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেই সব দেশে যাচ্ছে দল। যাওয়া হচ্ছে গ্রিস, ডেনমার্ক, পানামা এবং সোমালিয়ায় যাদের সদস্যপদ শেষ হচ্ছে পরের বছর ডিসেম্বরে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সংযুক্ত এই দেশগুলির পাশাপাশি, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে যাচ্ছে প্রতিনিধি দল। যার মধ্যে রয়েছে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, মিশর, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। এরা ওআইসি-র প্রথম সারিতে থাকা রাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে এই দেশগুলির সম্পর্ক অন্ধ ধর্মীয় বোধ নয়, বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করানো। অন্য দিকে, কানাডা বাদে জি-৭ ভুক্ত জার্মানি, ইটালি, জাপান ও ইইউ-র দেশগুলিতে যাচ্ছে দল। শেষ মুহূর্তে যুক্ত করা হয়েছে স্পেনকে, যারা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। ব্রিকস-এর ব্রাজ়িল ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সফরকারী রাষ্ট্রের তালিকায় আনা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব নীতির কথা মাথায় রেখে রাখা হয়েছে সিঙ্গাপুরকেও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-Pakistan USA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy