বাইশ গজের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনেও প্রত্যাশিত ভাবেই চড়ায় পৌঁছল। এশিয়া কাপ জয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টেনে এনেছিলেন ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গ। তার কয়েক ঘণ্টা পরই পহেলগাম হামলার পর এই প্রথম বসা রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের নেতৃত্বে সাউথ ব্লকের কূটনীতিকের দল নিশানা করল ইসলামাবাদকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে পাকিস্তানকে ‘টেররিস্তান’ হিসাবে উল্লেখ করল ভারত। এই উত্তেজনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। তবে বিষয়টি নেহাতই বাগ্যুদ্ধে সীমিত থাকবে, না আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে তার সরাসরি প্রতিফলন পড়বে— সে দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
শনিবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে নাম না করে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র’ বলে তোপ দেগেছিলেন। সেই শুরু। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ভারতের তৈরি করা কূটনৈতিক জালে পা দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের ভূমিকাকে আরও ঊলঙ্গ করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। জয়শঙ্করের বক্তৃতার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় জবাব দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দাবি করেন, ভারত বার বার মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই ভাবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ইসলামাবাদের কূটনীতিক। পাকিস্তানের জবাবি বক্তব্যের পর তখনই পাল্টা মুখ খুলে ভারত বুঝিয়ে দেয়, ‘ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি’ দশা ইসলামাবাদের। জয়শঙ্কর তাঁর বক্তৃতায় পাকিস্তানের নাম না করলেও ইসলামাবাদ নিজেই নিজের কোলে ঝোল টেনেছে।
এর পর আর বিষয়টি আর ভাববাচ্যে থাকে না। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিদলের ‘সেকেন্ড সেক্রেটারি’ রেন্তালা শ্রীনিবাস বলেন, “পাকিস্তানের যে কুখ্যাতি রয়েছে, তা আর বিশদে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের হাতের ছাপ সর্বত্র, সমস্ত ভূখণ্ডে প্রবল ভাবে প্রত্যক্ষ। এটা শুধু ওই দেশের শত্রু অথবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক।” তার পরেই পাকিস্তানকে ‘টেররিস্তান’ বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কোনও যুক্তি আর অসত্য ভাষণই ওই টেররিস্তানের অপরাধকে মুছে দিতে পারবে না।” ভারতের প্রতিনিধির এই মন্তব্যের পরেই জবাব দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান রাষ্ট্রপুঞ্জের পাক প্রতিনিধি। তিনি বক্তৃতা শুরু করার আগেই কক্ষ ত্যাগ করেন ভারতের প্রতিনিধি শ্রীনিবাস।
শনিবারই রাষ্ট্রপুঞ্জে নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, জয়শঙ্কর এক প্রতিবেশী দেশের কথা বলেছেন মাত্র। কিন্তু নাম করেননি। তার পরেও পাকিস্তান যে ভাবে জয়শঙ্করের মন্তব্যের ‘জবাব’ দিতে তৎপর হয়েছে, তা থেকেই সন্ত্রাসবাদে তাদের ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছে নয়াদিল্লি। জয়শঙ্কর তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে বড় বড় জঙ্গি হামলার মূল উৎস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি দেশেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকা সেই দেশের নাগরিকের নামে ভর্তি।” পহেলগামের জঙ্গি হামলাকে ‘সীমান্তপারের বর্বরতা’ বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, সম্ভবত কৌশলগত কারণেই পাকিস্তানের নাম না-করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)