প্রতীকী ছবি।
ঠিকানা দেশের রাজধানী শহর। কিন্তু আদতে গ্রাম। খাতায়-কলমে দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিমে, নজফগড়ের সুরখপুর রাজধানীর প্রথম ‘ডিজিটাল গ্রাম’।
নোট বাতিলের পরে ঢাক পিটিয়ে সুরখপুরকে দিল্লির প্রথম ‘ডিজিটাল গ্রাম’ ঘোষণা করা হয়েছিল। গ্রামের শ’খানেক পরিবারেই কারও না কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে, আধার নম্বর জুড়ে সকলকেই ডেবিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। সুরখপুরের দু’টি মুদি দোকানে নিখরচায় দেওয়া হয়েছিল কার্ডে লেনদেনের যন্ত্র। শেখানো হয়েছিল, নগদ ছাড়াই স্মার্ট ফোন আর কার্ডেই কী ভাবে লেনদেন করা যায়। সে সব ফেব্রুয়ারি মাসের কথা।
নোটবন্দির বর্ষপূর্তিতে ছবিটা কেমন? দিল্লির কেন্দ্রস্থল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে সরকারি প্রকল্প পৌঁছেছে। কিন্তু ইন্টারনেট যোগাযোগ ঠিক মতো পৌঁছয়নি। বসেনি মোবাইল টাওয়ার। কত ক্ষণ বিজলি থাকে, তারও ঠিকঠিকানা নেই। মুদি দোকানের মালিক সুরত সিংহ সোলাঙ্কি তাই বিনা মূল্যে পাওয়া পিওএস যন্ত্র প্লাস্টিকে মুড়ে, বাক্সে ঢুকিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রেখেছেন।
আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। তা হল, ব্যবহার করতে না করতে, কী ভাবে ওই যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়, সেটাও ভুলে গিয়েছেন সুরতরা। ফলে সুরখপুর আবার ফিরে গিয়েছে নগদে।
ফেরা যাক রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে। নোট বাতিলের পরে চাঁদনি চক থেকে সদর বাজার— সব জায়গাতেই ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছিল। কিন্তু এখন আবার ফিরে এসেছে পুরনো ব্যবস্থায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী নোটবন্দি করে নগদ লেনদেন কমাতে বলেছিলেন। কিন্তু জিএসটি চালু করে তিনিই ফের নগদে লেনদেন বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এই হেঁয়ালির উত্তর মিলল গোল মার্কেটের পঞ্চকুঁইয়া আসবাব বাজারে। নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলির নাকের ডগাতেই এই বাজারে দরদাম শুরু করলেই ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করবেন, ‘‘নগদে কিনবেন না কার্ডে?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই সমাধান আসবে, ‘‘নগদে কিনতে ২৮ শতাংশ জিএসটি লাগবে না।’’ পাহাড়গঞ্জ কিংবা করোল বাগের হোটেলগুলিতেও একই ছবি। কম্পিউটারে তৈরি বিল না চাইলেই ১৮% জিএসটি মাফ। বেশ কিছুটা সাশ্রয় করে, নগদে বিল মিটিয়ে, হাসি মুখে হোটেল ছাড়ছেন অতিথিরা।
সরকারি হিসেবও একই কথা বলছে। নোটবন্দির পরে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছিল ঠিকই। কিন্তু কমতে কমতে তা ফের আগের জায়গায় পৌঁছেছে। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশনের হিসেব বলছে, গত নভেম্বরে ৯৪ লক্ষ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছিল। মার্চে তা বেড়ে হয়েছিল ১৪৯ লক্ষ কোটি টাকা। অক্টোবের তা ফের ১০০ লক্ষ কোটির নীচে নেমে এসেছে।
চাঁদনি চকে বিয়ের কেনাকাটা, দারিবা কালানে রূপোর সামগ্রীর বাজার, উপহারের কিনারি বাজার— সর্বত্র একই ছবি। যেখানেই জিএসটি ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ, সেখানেই নগদে লেনদেন। এমনি কেনাবেচাও নগদে। ব্যবসায়ীদের মুখে একই কথা। হাতে নগদ থাকলে কে আর ও সব ঝুটঝামেলায় যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy